এবার বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর, অভিযোগ মানহানির
মানহানির অভিযোগে বিশ্বভারতীর (Visva Bharati) উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতন থানায় এফআইআর দায়ের করলেন শিক্ষাভবনেরই পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক মানস মাইতি। ঘটনায় শান্তিনিকেতনে তুমুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮জুন উপাচার্যের ডাকা অনলাইন বৈঠকে অধ্যাপকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া সংস্কার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন উপাচার্য। পাশাপাশি অধ্যাপক মাইতিকে রীতিমতো অসম্মান করে বৈঠক থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মানহানি অভিযোগ জানিয়ে শুক্রবার ই-মেল মারফত শান্তিনিকেতন থানায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর (FIR) করেন মানসবাবু।
এ ব্যাপারে পুলিস সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠি বলেন, অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অধ্যাপক মাইতির কাছে প্রমাণ ও তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে। পুলিস ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। শুক্রবার ই-মেল মারফত থানায় দায়ের করা এফআইআর-এ মানসবাবু লেখেন, ওই মিটিংয়ে বক্তব্য পেশ করার সময় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী হঠাৎই অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিরূপ এবং অপমানজনক মন্তব্য করতে থাকেন। উপাচার্য বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই, তাঁরা বাড়িতে বসে মোটা টাকা বেতন নেন। উপাচার্য ওই বৈঠকে বলেন, এর দায় অধ্যাপকদের নয়, তাঁদের বাবা-মায়েদের। কারণ, তাঁরা সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দেননি। এমন কথা বলে তিনি মিটিংয়ে উপস্থিত সবার সামনে আমাকে সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য অধ্যাপকদের চূড়ান্ত অপমান ও অসম্মান করে মানহানি করেন। এরপর তিনি সরাসরি আমাকে আক্রমণ করেন। প্রতিবাদ করায় অধীনস্থ আধিকারিককে দিয়ে আমাকে ওই অনলাইন মিটিং থেকে বার করে দেন। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর এমন বক্তব্য ও কার্যকলাপের ফলে আমার সম্মানহানি হয়েছে। তিনি সজ্ঞানে, ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে এবং সহকর্মী অধ্যাপকদের প্রকাশ্যে হেয় করার জন্য এমন মন্তব্য করেন। উপাচার্যের বিতর্কিত বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল সহ নানা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ফলে আমার এবং সহকর্মী অধ্যাপকদের নিদারুণ সম্মানহানি হয়েছে।
এবিষয়ে অধ্যাপক মানস মাইতি কোনও কথা বলতে রাজি হননি। বিশ্বভারতীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অধ্যাপকদের সংগঠন ভিবিইউএফএ প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী প্রতিনিয়ত যেভাবে অধ্যাপকদের অপমান করছেন তাতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে মানসবাবু প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, আমরা তাঁর পাশে আছি।
উল্লেখ্য, গত ৮জুন, মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর একটি অনলাইন বৈঠক বসেছিল। চলতি করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও অন্যান্য কাজ কীভাবে করা হবে সে নিয়ে আলোচনার জন্যে ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠকে শুরু থেকেই উপাচার্য কার্যত অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকেন বলে অভিযোগ। বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে নানা সময় যে সমস্ত অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ই-মেল করে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া সংস্কার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন উপাচার্য। আর তাতেই অপমানিত বোধ করেন অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা।