কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইস্পাত শিল্পের শ্রমিকরা
কৃষক আন্দোলনের ধাঁচে এবার শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল হতে চলেছে দেশ। পূর্ব ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে থাকা সেলের অধীনে সব কারখানায় শ্রমিকরা কালা দিবস পালন, একদিনের অনশন ও ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। মূলত কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অধীনে থাকা সেল কর্তৃপক্ষের অনমনীয় মনোভাবের জন্যই সবকটি শ্রমিক সংগঠন একযোগে এই আন্দোলনে নামছে। তাদের দাবি, প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে স্থায়ী শ্রমিকদের বেতন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস হয়নি। ঠিকা শ্রমিকরাও প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বারবার আলোচনায় বসেও কোনও ফল না মেলায় আন্দোলনের পথে হাঁটছেন শ্রমিকরা। সোমবারই ডিএসপি, ইস্কো সহ সেলের সবকটি কারখানায় ধর্মঘটের নোটিস দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। কৃষক আন্দোলনের পর এবার শ্রমিক আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়লে তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তিকর হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দিল্লির সীমানায় জারি থাকা কৃষক আন্দোলন কেন্দ্রীয় সরকারের ঘুম কেড়েছে। কৃষি বিল নিয়ে দেশজুড়ে বিজেপি সরকারের প্রতি কৃষকদের ক্ষোভের আঁচ মিলেছে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও। এবার কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষও দাঁনা বাঁধছে। সিটু, আইএনটিইউসি, আইএনটিটিইউসি, এআইটিইউসি, এইচএমএস সহ ছ’টি শ্রমিক সংগঠন যেভাবে একযোগে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা সেলের প্রতি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সেলের হাজার হাজার কর্মীদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস হয়। নানা খাতে বেতন বৃদ্ধি হয়। স্থায়ী কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মীদের বেতনও বাড়ে। ১ জানুয়ারি ২০১২ সালে শেষ বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস(ওয়েজ রিভিশন) হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে নতুন বেতন কাঠামো লাগু হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও তা বকেয়া রয়েছে। পাঁচ বার এনিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে কর্তৃপক্ষ আলোচনা করলেও সহমত হয়নি। তাই এবার আন্দোলনের পথে নামছে শ্রমিকরা।
শ্রমিক নেতাদের দাবি, বেতন বৃদ্ধি নিয়ে দরাদরি হয়, কিন্তু কোনওভাবেই ম্যানেজমেন্ট এতটা অনমনীয় থাকে না। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নির্দেশেই সেল কর্তৃপক্ষ এই ভূমিকা নিয়েছে বলে অভিযোগ। এবার আলোচনার রাস্তায় না হেঁটে টানা আন্দোলন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ২৮ জুন হবে কালো ব্যাজ করে কালাদিবস পালন। ২৯ জুন একদিনের অনশন। ৩০ জুন সেলের সমস্ত কারখানায় বন্ধ পালন করা হবে। সেলের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেডেও এই কর্মসূচি পালিত হবে। সংগঠনগুলি হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে, প্রয়োজনে কৃষকদের মতো ধারাবাহিক আন্দোলন করতে পারেন শ্রমিকরা।
সোমবার ডিএসপি, ইস্কো সহ সব বড় কারখানাতেই ছ’টি শ্রমিক সংগঠন একযোগে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে ধর্মঘটের নোটিস দিয়ে আসে। সিটু নেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা বাধ্য হয়েই ধর্মঘটের পথে গিয়েছি। কর্তৃপক্ষের এমন অনমনীয় মনোভাবের পিছনে নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় সরকারের হাত রয়েছে। একদিনের ধর্মঘটে কাজ না হলে লাগাতার আন্দোলন করে যাব।
আইএনটিটিইউসি নেতা স্নেহাশিস ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নতুন বেতন সমঝোতা বকেয়া পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের পাশাপাশি শ্রমিকদের উপর শোষণ নীতি চালু করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াই হবে। আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি বিকাশ ঘটক বলেন, বেতন বৃদ্ধির দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে না নিলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।