তেল দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই ওঁদের, শোভন-বৈশাখীকে কটাক্ষ রত্নার
শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জুটি তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে ‘বার্তা’ দিয়েছেন সোমবার রাতে। কিন্তু তাঁদের সেই বার্তা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য করলেন শোভনেয় স্ত্রী তথা বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়। রবিবার প্রয়াত হন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) মা শিবানীদেবী। সোমবার রাতে সমবেদনা জানাতে তাঁর বাড়িতে যান শোভন-বৈশাখী। একই রকম ভাবে পার্থর বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই পার্থর বাড়ি যাওয়াকে ‘সামাজিকতা এবং সৌজন্য’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, পার্থর মাতৃবিয়োগে শোকের সময় তাঁরা সৌজন্য প্রকাশ করতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু রাজীবের মতোই শোভন-বৈশাখীকে নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। তা আরও জলবাতাস পেয়েছে বৈশাখীর মন্তব্যে। তিনি সোমবার রাতে বলেছেন, “আমি চাই শোভনবাবু সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসুন। শোভনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। পরিবারের মতো। অসময়ে মুখ্যমন্ত্রীও ওঁর পাশে ছিলেন। উনি ওঁর বাকি তিন সহকর্মীর জন্য যতটা চিন্তিত ছিলেন (নারদ মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর। শোভনের সঙ্গে গ্রেফতার হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং মদন মিত্র), শোভনের (Sovan Chatterjee) জন্যও ততটাই চিন্তিত ছিলেন। আমরা ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ ওঁর কাছে। যে ধরনের কঠিন সময়ে তিনি পাশে থেকেছেন, সেটা কখনওই ভোলার নয়। সক্রিয় রাজনীতিতে এখনও শোভনের অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আমিও মনে করি ওঁর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসা উচিত।” বৈশাখীর (Baishakhi Banerjee) আরও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল, “শোভনকে যে দল বেশি ভালবাসে ও সে দিকেই যাবে।”
মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই বিজেপি-তে চলে যাওয়া তৃণমূল নেতাদের ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন প্রাক্তন সেচমন্ত্রী রাজীব, তেমনই রয়েছেন শোভন-বৈশাখীও। তবে সোমবার রাতে পার্থর বাড়ি থেকে বেরিয়ে শোভন-বৈশাখী ‘তৃণমূলবার্তা’ দিতেই মুখ খুলেছেন রত্না (Ratna Chatterjee)। তিনি বলেছেন, ‘‘দল যদি কাউকে ফেরত নিতে চায়, তা হলে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সর্বোচ্চ নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা আমি মাথা পেতে নেব। বিরোধিতা করার কোন প্রশ্ন নেই।’’ কিন্তু পাশাপাশিই আরও কিছু বলেছেন রত্না।
বেহালা পূর্বের বিধায়কের কথায়, ‘‘যাঁরা এখন দলে ফিরবেন বলে বার্তা পাঠাচ্ছেন, তাঁরা ভোটের আগে বিজেপি-র মঞ্চ থেকে আমাদের শীর্ষনেতাদের উদ্দেশে কী কী বলেছেন তা সকলেই জানে।’’ রত্নার কথায়, ‘‘দিদিকে সৎমা বলা হয়েছে। অভিষেককে কয়লাচোর, গরুচোর, বালিচোর বলে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। বলা হয়েছেস মুখ্যমন্ত্রী সোনার বাংলা বানাতে গিয়ে সোনার গোপাল বানিয়ে ফেলেছেন। ডায়মন্ড হারবারের অভিষেককে জিতিয়ে নাকি কেউ কেউ পাপ করেছেন। তৃণমূলকে হারিয়ে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন।’’ শোভনদের নিয়ে রত্নার কটাক্ষ, ‘‘দলে ফিরতে এখন শীর্ষনেতৃত্বকে তেল দিচ্ছেন ওঁরা। তেল দেওয়া ছাড়া এখন আর কোনও উপায় নেই এঁদের।’’
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে নেটমাধ্যমে একটি ৫৪ মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করে শোভন-বৈশাখী আক্রমণ করেছিলেন রত্নাকে। রত্নাও তার পাল্টা জবাব দিয়ে তাঁদের ‘কলঙ্কিত’ নায়ক-নায়িকা বলেছিলেন। তার পরেই সোমবার শোভন-বৈশাখীর পার্থের বাড়িতে গমন এবং বার্তা।