মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি ট্যুইটারে প্রকাশ, ধনখড়কে তুলোধনা স্বরাষ্ট্র দপ্তরের
রাজ্যের সমালোচনা বাদে প্রশংসা করতে তাঁকে কেউ দেখেননি। যে কোনও ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাটা যাঁর প্রথম পছন্দের, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, সেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) এখনও চিন্তিত ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলানো, ঘূর্ণিঝড় যশের তাণ্ডবলীলার পর পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কিংবা নিউটাউনে পাঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারকে নিকেশ করার জন্য এসটিএফের সফল অভিযান— রাজ্য সরকারের অবস্থানকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন, এমনটা কেউ মনে করতে পারছেন না। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে রাজ্যজুড়ে চলছে কড়া বিধিনিষেধ আর ভ্যাকসিন পর্ব, এর মধ্যেই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) চিঠি লিখে ফের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিসের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন রাজ্যপাল। এখানেই ক্ষান্ত হননি, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে লেখা চিঠি কিছুক্ষণের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া ট্যুইটারের মাধ্যমে জনসমক্ষে নিয়ে আসেন ধনখড় ।
চিঠিতে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সঙ্গেই, গত ১৭ মে সিবিআই দপ্তর নিজাম প্যালেস প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছেন। রাজ্যপালের ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর এদিন সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া মিলেছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফে। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের স্পষ্টবার্তা—প্রতিষ্ঠিত সব রীতিকে লঙ্ঘন করে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি জনসমক্ষে এনেছেন রাজ্যপাল। শুধু তাই নয়, অতিরঞ্জিত তথ্য আনা হয়েছে ওই চিঠিতে। মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে ভোট পরবর্তী হিংসা ইস্যুতে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। তার আগে অবশ্য লিখেছেন, ‘আমি ব্যথিত হৃদয়ে লক্ষ্য করছি, ভোট পরবর্তী হিংসা এবং রক্তপাত নিয়ে আপনার নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা।’ জবাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর। তারা জানিয়েছে, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা হয়েছে সেই সময়ে, যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার ছিল নির্বাচন কমিশনের। রাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পরই কড়া হাতে দুষ্কৃতীদের দমন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অসমাজিক লোকজন এবং দুষ্কৃতীদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
রাজ্যপালের ডাকে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা করতে যাবেন কি না, সেরকম কোনও ইঙ্গিত স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফে পাওয়া যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি জনসমক্ষে নিয়ে আসার ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) বলেছেন, যশের ধাক্কা আর করোনার ঢেউয়ের মতো বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে চলছে রাজ্য। সেসব প্রসঙ্গ নিয়ে কোনও ভূমিকাই নেই রাজ্যপালের। স্বপ্নভঙ্গ হওয়াতে বিজেপির (BJP) হতাশার সঙ্গে মনে হচ্ছে নিজের হতাশাকেও জুড়েছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তাই নানাভাবে সরকারকে বিব্রত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে, রাজ্যপালের সাম্প্রতিক ভূমিকাকে ভালোভাবে দেখছে না বাম শরিক সিপিআই। এদিন দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে—অবিলম্বে রাজ্য থেকে প্রত্যাহার করা হোক ধনখড় কে। রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকেও ধনখড় প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। রাজ্যপালের ভূমিকার নিন্দা করে বামফ্রন্ট বিবৃতি দিচ্ছে বলে সূত্রের খবর।