ফ্লপ ধনখড়ের দিল্লি সফর, দেখা করার সময়ই দিলেন না অমিত শাহ
বাংলায় গণতন্ত্র শ্বাসরুদ্ধ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েও দায়িত্ব পালন করছেন না–এমনই কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে রাজধানী দিল্লিতে গিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলার বিষয়ে ‘অভিযোগ’ জানানো। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে দিল্লি পৌঁছে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বাংলার রাজ্যপাল শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর সঙ্গে বৈঠক করতে পেরেছেন। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে এখনও সময় দেননি। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ধনখড় আদৌ বৈঠক করতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে, শোনা যাচ্ছে, অমিত শাহের (Amit Shah) বাসভবনে গিয়ে সন্ধ্যায় দেখা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন রাজ্যপাল ধনখড়। স্বরাষ্টমন্ত্রক সূত্রে খবর, আগে থেকে সময় নেওয়া ছিল না ধনখড়ের। বুধবার চলছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। তা নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
দিল্লি সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার রাজ্যপালের বৈঠকের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও তাঁর দেখা হওয়া নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে। অর্থাৎ, যে লক্ষ্য নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন ধনখড়, তা প্রায় পূর্ণ হচ্ছে না বলেই সূত্রের খবর। তাই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ‘দুয়ারে’ যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন রাজ্যপাল। ইতিমধ্যেই তিনি গিয়েছেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর বাসভবনে। সেখানে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রীর সঙ্গে ছবিও তোলেন তিনি। তা তুলে দেন ট্যুইটারেও। কিন্তু যে রাজ্যপাল প্রতিদিন ট্যুইটার, সংবামাধ্যমে মুখ খুলতে আর রাজ্যকে আক্রমণ শানাতে সিদ্ধহস্ত, সেই তিনিই বুধবার সকাল থেকে কার্যত ‘স্পিকটি নট’ মোডে চলে গিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে দেখলেই হাতজোড় করে এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু কেন রাজ্যপালের এই ‘রূপবদল’? রাজনৈতিক মহলের মতে, সম্প্রতি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্বজনপোষনের অভিযোগ উঠেছে। রাজভবনের ওএসডি পদে আত্মীয় ও পরিচিতদের জায়গা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ধনখড়ের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। যদিও তা অস্বীকার করেছেন ধনখড়। তবে, দিল্লির শীর্ষ মহল বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি। প্রতিনিয়ত রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে এমনিতেই রাজ্যপালের ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা এখন প্রশ্নের মুখে। বাংলায় তাঁর ‘ইমেজ’ও তেমন সুবিধার নয় বলেই মনে করে বিজেপি নেতৃত্বের একটা বড় অংশও। এই পরিস্থিতিতে গত পরশু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে রাজভবনে দেখা করেন রাজ্যপাল। ফের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তা নিয়েও পাল্টা আসরে নেমেছে তৃণমূল।
দিল্লি যাত্রা প্রসঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ট্যুইটারে তীব্র কটাক্ষ করেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ফের রাজ্যপালকে আঙ্কেলজি সম্বোধন করে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘আঙ্কলজি বলেছেন যে, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। বাংলার রাজ্যপাল সাহেব, দয়া করে আর ফিরবেন না।’ রাজ্যকে মানসিক অবসাদগ্রস্ত বলে কটাক্ষ করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। এই পরিস্থিতিতে যে ‘লক্ষ্যে’ দিল্লি গিয়েছেন ধনখড়, তা এখনও পূর্ণতা পায়নি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের মতে, কয়লার পাশাপাশি সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর পদেও রয়েছেন প্রহ্লাদ যোশী। তাঁর সঙ্গে দেখা করে বাংলার কয়লা দুর্নীতি নিয়ে ও শিশির অধিকারীদের সাংসদ পদ নিয়ে তৃণমূল অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলোচনা করে থাকতে পারেন ধনখড়। কিন্তু অমিত শাহ বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা না করলে তাঁর দিল্লিযাত্রা সেই গুরুত্ব পাবে না, সেই কারণেই এখনও কিছুটা নীরবই আছেন রাজ্যপাল।