বিনামূল্যে টিকা দেবে কেন্দ্র, ৭০ কোটি ফেরত চাইল বাংলা
বিধানসভা নির্বাচন শেষ। বিপুল ভোটে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। তা সত্ত্বেও নানা ছলছুতোয় রাজ্যের সঙ্গে বিবাদ জারি রেখে চাপে রাখার কৌশল অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্র (Union Govt)। যেমন বুনো ওল, তেমনই বাঘা তেঁতুল—এই নীতিতে চলে প্রত্যুত্তর জারি রাখল রাজ্যও। দেশজুড়ে চাপের মুখে শেষমেশ সব রাজ্যকে বিনামূল্যে টিকা (Vaccine) দিতে রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমন পরিস্থিতিতে এবার টিকা নির্মাতাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিনের কিনতে অগ্রিম বাবদ মেটানো ৭০ কোটি টাকা ফেরত চাইল নবান্ন (Nabanna)। বাতিল করল ২২ লক্ষ টিকার ডোজের বরাতও। কেন্দ্রকে চিঠি লিখে সেকথা সাফ সাফ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Govt Of West Bengal)। রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে টিকা দিতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য। তাই ভ্যাকসিন কিনতে উৎপাদক সংস্থা দু’টিকে এই বিপুল অঙ্কের টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। ক’দিন আগেই তার প্রথম কনসাইনমেন্টে সাড়ে চার লক্ষ ডোজ রাজ্যে এসেছে। পদস্থ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার তা নিজেদের হাতে না নিয়ে কেন্দ্রীয় স্টোরে পাঠিয়েছে। বাদ বাকি ডোজের আর দরকার নেই জানিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে নবান্ন।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লাগাতার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) চিঠি লিখে দেশবাসীর জন্য বিনামূল্যের টিকার দাবি জানিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিছুদিন আগে পর্যন্তও তাতে টনক নড়েনি কেন্দ্রের। কার্যত বাধ্য হয়েই রাজ্যবাসীর স্বার্থে সরাসরি টিকা নির্মাতাদের কাছ থেকেই ভ্যাকসিন কেনা শুরু করে বাংলা। এরপর মমতার পথেই অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীরা বিনামূল্যে টিকাকরণের দাবিতে সোচ্চার হলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে মোদি সরকারের। আগামী ২১ জুন থেকে ১৮ ঊর্ধ্ব সকলের জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, শুরুর দিনগুলি থেকেই উৎপাদিত সব টিকা কেন্দ্রকে দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত বায়োটেক, সিরাম ইনস্টিটিউট। কেন্দ্র প্রথমে ৪৫ অনূর্ধ্বদের বিনামূল্যে টিকা দিতে চায়নি। ফলে বাংলা সহ রাজ্যগুলি সরাসরি ওই দুই সংস্থার কাছে থেকে টিকা কেনার আর্জি জানায়। কেন্দ্র নিজে উৎপাদিত টিকার ৫০ শতাংশ কিনে, বাকি ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলিকে বিক্রি করার জন্য নির্দেশ দেয় নির্মাতা সংস্থাগুলিকে। কোন রাজ্য কত টিকা পাবে, তাও ঠিক করে দেয় মোদি সরকারই। রাজ্য তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার বরাত দিয়েছিল। তখন কেন্দ্র নির্মাতা সংস্থাগুলিকে বাংলাকে প্রথম লপ্তে ১৮ লক্ষ ডোজ পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তাও আবার ‘প্রি পেইড’ ব্যবস্থায়। অর্থাৎ, টিকা ঘরে ঢোকার আগেই মেটাতে হবে টাকা। সেইমতো গত মে মাসে ১৮ লক্ষ ডোজের জন্য প্রায় ৫৯ কোটি টাকা আগেভাগেই মিটিয়ে দেয় নবান্ন। সেই টিকাই এখন বিভিন্ন জায়গায় বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কেন্দ্র বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে রাজি না হওয়ায়, জুন মাসে রাজ্যবাসীর জন্য ফের নির্মাতা সংস্থার দ্বারস্থ হয় নবান্ন। কেন্দ্র চলতি মাসের জন্য ২২ লক্ষ ডোজ স্থির করে দেয়। সেইমতো অগ্রিম বাবদ ৭০ কোটি টাকা মিটিয়ে দেয় রাজ্য। কিন্তু, তারপরেই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ২১ জুন থেকে দেশব্যাপী বিনামূল্যে টিকাকরণের কথা ঘোষণা করেন। ফলে রাজ্যও ওই টাকা ফেরত চাওয়ার পথেই হাঁটল।