হাতে গোনা কলাকুশলী নিয়ে টলিপাড়ায় শুরু হল শ্যুটিং
রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার থেকে শহরের বিভিন্ন স্টুডিওতে ধারাবাহিকের শ্যুটিং (Shooting) শুরু হল। কিন্তু শ্যুটিং শুরুর প্রক্রিয়া এদিন মোটেই মসৃণ ছিল না। সকাল ১০টা নাগাদ ছিল ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের কল টাইম। ঠিক সময়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা হাজির হয়েছিলেন টালিগঞ্জের (Tollygunge) ১৩ নম্বর স্টুডিওতে। কিন্তু সেখানে কলাকুশলীদের দেখা মেলেনি। টলিপাড়ার কলাকুশলীদের সংগঠন ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, যে ২০টি ধারাবাহিক তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে ‘শ্যুট ফ্রম হোম’ পদ্ধতিতে শ্যুটিং করেছে, সেই ধারাবাহিকগুলোতে কাজ করবেন না কলাকুশলীরা।
তাই কোনও কলাকুশলী এই ধারাবাহিকের শ্যুটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না। অগত্যা শ্যুটিং শুরু হতে হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। প্রযোজকরা নিজেদের উদ্যোগে ক্যামেরা ম্যান, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার জোগাড় করে শ্যুটিং করেন বলে সূত্রের খবর।
‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের অভিনেতা নীল ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘আমাদের কল টাইম দেওয়া হয়েছে আমরা এসেছি। সরকার তো শ্যুটিং শুরুর অনুমতি দিয়েছে।’ প্রায় এক মাস পর আবার শ্যুটিং ফ্লোরে এসে স্বভাবতই খুশি পর্দার কৃষ্ণকলি তিয়াসা রায়। বলছিলেন, ‘এতদিন পর সেটে এসে দেখছি, মাত্র হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে কাজ হচ্ছে। সেটা দেখে একটু খারাপ লাগছে।’ সরকারি গাইডলাইন মেনে মাত্র ১০-১২ জনকে নিয়ে শ্যুটিং হচ্ছে। শ্যুটিং ফ্লোরে এদিন উপস্থিত ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের পরিচালক বিজয় মাজি বলছিলেন, ‘আশা করি, ফেডারেশন এবং প্রযোজকদের মধ্যে এই জট কেটে যাবে। ফেডারেশনের সদস্য প্রায় কেউই শ্যুটিংয়ে উপস্থিত নেই।’
সারা কলকাতার স্টুডিওতে শ্যুটিংয়ের ছবি কমবেশি একই রকম ছিল। এনটি ওয়ান স্টুডিওতে ‘অপরাজিতা অপু’ ধারাবাহিকের শ্যুটিং শুরু হয়েছে। শ্যুটিং শুরুর আগে এই স্টুডিওটি পুরোপুরি স্যানিটাইজ করা হয়। স্টুডিওর কর্ণধার সৌগত নন্দী বললেন, ‘আমরা পুরো স্টুডিও স্যানিটাইজ করেছি। আপাতত তিনটে ফ্লোরে শ্যুটিং হচ্ছে।’ এই স্টুডিওতে ‘বরণ’, ‘নয়নতারা’ ও ‘অপরাজিতা অপু’ ধারাবাহিকের শ্যুটিং হয়েছে। ‘অপরাজিতা অপু’ ধারাবাহিকের অভিনেতা উজ্জ্বল মালাকার বলছিলেন, ‘এতদিন বাড়ি থেকে শ্যুট করার পর আজ থেকে ফ্লোরে এসে শ্যুটিং করতে ভালোই লাগছে। মেক আপ নিজেদেরই করতে হয়েছে।’
এদিন বিকেলেই আর্টিস্ট ফোরাম, সাপ্লায়ারদের সংগঠন ও প্রযোজকদের সংগঠন যৌথভাবে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে এই তিনটি সংগঠন একযোগে ফেডারেশনকে সব সমস্যার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তাঁদের দাবি, কলাকুশলীদের ভয় দেখিয়ে শ্যুটিংয়ে আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকী, আর্টিস্ট ফোরামের তরফে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাঁরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু পারলাম না। শ্যুটিং করতে তাঁদের বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রযোজক নিসপাল সিং রানের কথায়, আমরা কথা বলে কাজ করতে ইচ্ছুক। তবে প্রযোজক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এদিন গিল্ডের সদস্যরা এসেই শ্যুটিংয়ের কাজে যোগ দিয়েছেন। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘আমরা যে শ্বেতপত্রের দাবি জানিয়েছিলাম, সেই উত্তরের অপেক্ষা করছি। ওই কয়েকটি ধারাবাহিক ছাড়া আজ সবকটি ধারাবাহিকের শ্যুটিং নির্বিঘ্নে হয়েছে বলেই জানি।’