সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকায় ‘ভ্যাকসিন অন বোট’
স্থলে টিকাদান কর্মসূচি চলছে, সে তো সবাই জানে। এবার ভাসমান নৌকায় টিকাকরণের কর্মসূচি নিতে চলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (South 24 Pargana) জেলা প্রশাসন। নদী-নালায় ভরা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সড়কপথের দেখা মেলে না, সেখানে নৌকায় চড়ে ভ্যাকসিন নিয়ে হাজির হবেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা (Health Workers)। ক্যাম্প হবে জলের উপরেই। গ্রামবাসীরা একে একে এসে উঠবেন নৌকায়। ইঞ্জেকশন নিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম। তারপর ফিরে যাবেন যে যার ঘরে। আসলে কেউ যাতে ভ্যাকসিন (Vaccine) পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সেই লক্ষ্যেই এই পরিকল্পনা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।
জেলাস্তরে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সরলীকরণ করা হয়েছে। যশ ও ভরা কোটালের দাপটে সুন্দরবনের (Sundarban) প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। ভাঙা ঘর মেরামত, ফের কৃষিকাজ শুরু, রুজি-রুটির সংস্থান— এটাই অগ্রাধিকার তাঁদের কাছে। তার পর টিকার প্রশ্ন। তাই প্রশাসন নিজের উদ্যোগেই টিকা নিয়ে হাজির হচ্ছে দুর্গত এলাকায়। চালু হচ্ছে ‘ভ্যাকসিন অন বোট’ (Vaccine OnBoat) পরিষেবা। ঠিক হয়েছে, নৌকায় করে গিয়েই সেখানকার বাসিন্দাদের টিকা দেওয়া হবে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, কোনও মানুষই যাতে ভ্যাকসিন পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, তাই যতটা সম্ভব তাঁদের কাছে পৌঁছনোই আমাদের লক্ষ্য।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার লড়াই করছে সুন্দরবন। সামনে আরও একটি ভরা কোটালের ভ্রুকুটি। ফলে এখন থেকেই রাতের ঘুম উড়েছে দ্বীপাঞ্চলের কয়েক হাজার বাসিন্দার। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রান্তিক এলাকার ৪৫ ঊর্ধ্ব বাসিন্দাদের টিকা দেওয়া হবে। গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, সাগর সহ বেশ কিছু ব্লকে এই কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানা গিয়েছে।
ঠিক হয়েছে, ভ্যাকসিন নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নৌকায় করে বিভিন্ন দ্বীপে যাবেন। নৌকাতেই থাকবে যাবতীয় ব্যবস্থা। ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক গ্রামবাসীদের নদীর পাড়ে কোনও জায়গায় জড়ো করবেন। সেখানেই ভিড়বে বিশেষ নৌকা। তারপর গ্রামবাসীরা একে একে নৌকায় উঠে টিকা নেবেন। কেউ অসুস্থ বোধ করেন, তার জন্য তৈরি রাখা হবে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স। ভ্যাকসিন বোটের সঙ্গেই সেটি ঘুরবে।
সূত্রের খবর, সুন্দরবনে যে মফস্সলগুলি রয়েছে, সেখানে টিকাদানের হার তুলনামূলক ভালো। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে অনেককেই এখনও করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। করোনাকে মোকাবিলা করতে হলে টিকাই একমাত্র ভরসা। তাই দ্বীপাঞ্চলবাসীর দুয়ারে পৌঁছে যেতে চাইছে প্রশাসন। পাশাপাশি ‘ভ্যাকসিন অন হুইলস’ চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের। সেক্ষেত্রে একটি বাস বিভিন্ন পাড়া ও এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ করবে। সোমবার জেলা প্রশাসনের হাতে আরও ২৫ হাজার ভ্যাকসিন এসেছে। ফলে এই নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।