করোনা আবহে এবারও গড়াবে না ৬২৫ বছরের মাহেশের রথের চাকা
করোনা (coronavirus) আবহে এবারও বন্ধ করা হল মাহেশের রথযাত্রা (Mahesh Rathyatra)। পুরীর পর মাহেশে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। ৬২৫ বছরের প্রাচীন এই রথযাত্রা গতবছরও বন্ধ ছিল। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংক্রমণের আশঙ্কায় এবার মন্দিরপ্রাঙ্গণেই টানা হবে রথ। ঠিক হয়েছে, অস্থায়ী ভাবে জগন্নাথ মন্দিরের পাশে তৈরি হবে মাসির বাড়ি। সেখানেই করোনাবিধি মেনেই সমস্ত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে।
গত বছরের মত এবছরেও পুরীর রথয়াত্রা (Puri Rath Yatra) হবে ভক্তদের ছাড়াই। আগামী ১২ জুলাই ভক্তসমাগম ছাড়াই পুরীর জগন্নথাথ মন্দিরে রথযাত্রা সম্পন্ন হবে। এবিষয়ে ওডিশার স্পেশ্যাল রিলিফ কমিশনার প্রদীপ কে জেনা বলেন, কোভিড বিধির কথা মাথায় রেখে এবছর পুরীর রথযাত্রায় ভক্তদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। এবারের রথযাত্রায় সেবাইতরাই কেবলমাত্র অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে তার জন্য সেবাইতদের কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে। এমনকি রথযাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর রিপোর্ট জমা করতে হবে। পাশাপাশি রথের দড়ি ৫০০-র বেশি সেবাইত টানতে পারবেন না। তার সঙ্গে শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) সমস্ত নির্দেশিকা মেনেই চলা হবে বলে জানান তিনি।
পুরীর পর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন রথ হুগলীর মাহেশের রথ। চৈতন্যদেব মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন। মাহেশের রথের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু বছরের ইতিহাস। মাহেশের রথের মেলার বর্ণনা রয়েছে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ উপন্যাসেও।
কথিত চতুর্দশ শতাব্দীতে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক ব্যক্তি পুরীতে তীর্থ করতে যান। তাঁর ইচ্ছে ছিল জগন্নাথদেবকে ভোগ খাওয়ানোর। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ তাতে বাঁধা দেন। মনের দুঃখে ধ্রুবানন্দ অনশন করে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবেন বলে ঠিক করেন।অনশনের তৃতীয় দিনে ধ্রুবানন্দ স্বপ্নাদেশ পান বাংলাতে ফিরে গিয়ে হুগলী নদীর ধারে মাহেশ বলে একটা জায়গায় জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করার।আদেশে এও বলা হয় যে ঠিক সময় মত নদীতে ভেসে আসা এক নিম কাঠ পাবেন ধ্রুবানন্দ, সেই কাঠ দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রা’র মুর্তি বানিয়ে নিজে হাতে তাঁদের ভোগ খাওয়াবেন। ধ্রুবানন্দ তাই করেন।
বর্তমান মন্দিরটি ১৭৫৫ সালে তৈরি করেন কলকাতার নারায়ণ চন্দ্র মল্লিক নামে এক ভক্ত। বর্তমান রথটি ১৮৮৫ সালে কৃষ্ণরাম বসু নামে এক ভক্ত মার্টিন বার্ন কোম্পানিকে দিয়ে তৈরি করান। রথটি বাংলার নবরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি। উচ্চতায় ৫০ ফুট এবং ওজনে ১২৫ টন। মোট ১২ টা চাকার ওপর দাঁড় করানো।
মাহেশের রথযাত্রা আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল।