এমপিল্যাড এর সিংহভাগ টাকা খরচ করেননি বিস্তা, বিতর্ক
বিজেপির দার্জিলিংয়ের এমপি রাজু বিস্তার (Raju Bista) এলাকা উন্নয়ন তহবিল (mplad) থেকে বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগই খরচ হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে এমপি এলাকা উন্নয়নের জন্য প্রথম কিস্তি বাবদ ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা পান। যারমধ্যে খরচ হয়নি এমন অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। চাঞ্চল্যকর এই তথ্য মিলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি রিপোর্টে। এদিকে, অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার পরও ওই অর্থ খরচ না হওয়ায় এমপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, ‘অনাবাসী’ এমপি গুরুত্বহীন প্রকল্প গড়ার প্রস্তাব দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিজেপির এমপি এর দায় প্রশাসনের কাঁধে চাপিয়েছেন। জেলা প্রশাসন অবশ্য তা মানতে নারাজ। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে জেলার রাজনীতিতে জোর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এমপিদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের খরচের হিসেব নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্ট্যাটেস্টিক অ্যান্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেনটেশন মন্ত্রক। সেই রিপোর্ট থেকেই দার্জিলিংয়ের এমপির উন্নয়ন তহবিলের খরচ না হওয়া অর্থের পরিমাণ জানা গিয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ আছে, এলাকার উন্নয়নে বছরে দু’টি কিস্তিতে পাঁচ কোটি টাকা করে পাওয়ার কথা এমপিদের। পাঁচবছরে এমপিদের প্রাপ্য ২৫ কোটি টাকা। সেইমতো ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে দার্জিলিংয়ের এমপি প্রথম কিস্তি বাবদ পান ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। যা ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সেই অর্থের মধ্যে খরচ হয়নি ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এলাকার উন্নয়নে এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা।
আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পর এমপি ফান্ডের এমন দশা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। দলের দার্জিলিং জেলার মুখপাত্র (সমতল) বেদব্রত দত্ত বলেন, জেলার এমপি অনাবাসী। তিনি এখানে পর্যটকের মতো আসেন, থাকেন, আবার দিল্লি চলে যান। ওঁর সঙ্গে এখানকার বাসিন্দাদের কোনও সম্পর্ক নেই। উন্নয়ন নিয়ে মানুষের চাহিদা তিনি বুঝতে পারেন না। এ জন্যই ওঁর প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রশাসনের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। কাজেই এলাকা উন্নয়ন তহবিলের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে এমপি ব্যর্থ হয়েছেন।
বিজেপির দার্জিলিংয়ের এমপি রাজু বিস্তা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তিনি বলেন, লকডাউনের জেরে প্রশাসনিক কাজকর্ম ধীরে চলায় ওই প্রকল্পগুলি গতি হারিয়েছে। তাছাড়া এই জেলায় ঘন ঘন জেলাশাসক বদল হওয়াতেও উন্নয়নমূলক কাজে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি তাঁর আশঙ্কা, রাজ্য সরকারের নির্দেশে তাঁর প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরে চলো মনোভাব নিয়ে চলছে জেলা প্রশাসন। যার জেরে তাঁর প্রস্তাবিত অনেক প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলছে।
যদিও প্রশাসনের আধিকারিকরা এমপির বক্তব্য মানতে নারাজ। দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা বলেন, কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় গতবছর দীর্ঘ সময় লকডাউন ছিল। তারপর বিধানসভা ভোট হয়। এখন আবার কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এই পরিস্থিতিতে জরুরি কাজকর্মগুলি হচ্ছে। পাশাপাশি এমপির সমস্ত প্রকল্পের অর্থ ব্লক স্তরে বরাদ্দ করা হয়েছে। ওসব প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এমপি ফান্ড থেকে খরচ হওয়া ২৪ লক্ষ টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে এমপি ফান্ডের টাকায় ৪৯টি প্রকল্প রূপায়ণের প্রস্তাব প্রশাসনের কাছে দেন রাজু বিস্তা। যারমধ্যে জেলা প্রশাসন ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন করে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, স্যানিটাইজেশন প্রভৃতির পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প আছে। এর বাইরে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে সাতটি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স এবং কোভিড মোকাবিলায় ৫০ লক্ষ টাকায় বিভিন্ন হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে এমপি জানিয়েছেন।