ডিভিসি জল ছাড়ায় প্লাবিত হাওড়া ও হুগলি
সময় যত গড়াচ্ছে, জলের চাপ ততই বাড়ছে। একটানা বৃষ্টি এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে দামোদর, রূপনারায়ণ, দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী ফুলে উঠেছে। তার উপর গোল বেঁধেছে ডিভিসির ছাড়া জল। গ্রীষ্মে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীতে এখন প্লাবনের পদধ্বনি। আমতা-উদয়নারায়ণপুর, আরামবাগ, তারকেশ্বর— হাওড়া (Howrah) ও হুগলি (Hooghly) জেলার গ্রামীণ এলাকায় এখন ত্রাহি ত্রাহি রব। দামোদর অববাহিকার এই অঞ্চলে কোথাও বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে গ্রামে, কোথাও আবার পাড়ের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছে জল। নিচু এলাকাগুলি বিশেষ করে চাষের জমিতে ইতিমধ্যেই জল ঢুকেছে বলে খবর। দুর্বল বাঁধগুলি চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের। তবে সেচদপ্তরের কর্মীরা বেশ কিছু জায়গায় বালির বস্তা ফেলে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শুক্রবার ডিভিসি ৭০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। দামোদরের সেই জলে তারকেশ্বরের বিনোগ্রামে জলেশ্বর মন্দির ও তৎসংলগ্ন এলাকা ভেসে গিয়েছে। বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে খানাকুলের ঘোড়াদহ, কাকনান, ধান্যঘোরী, রামচন্দ্রপুর, জগৎপুর, কুশলি, মারোখানা, রাজহাটি ১নং, কিশোরপুর, ঠাকুরানীচকের মতো এলাকায়। উদয়নারায়ণপুরের কুরচি গ্রামের মণ্ডলপাড়া, চক্রবর্তীপাড়া এবং সিংটি গ্রামের ঠাকুরানিচক এলাকায় বাঁধ উপচে জল ঢুকতে শুরু করেছে গ্রামে। নিচু জায়গা থেকে দুর্গত মানুষদের আগেভাগেই সরাতে শুরু করেছে প্রশাসন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাঁধের উপর। প্লাস্টিক বা ত্রিপলের আচ্ছাদন দিয়ে সেখানে রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়করা শনিবার রাত থেকেই গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। দফায় দফায় হয়েছে প্রশাসনিক বৈঠক।
শুধু দামোদর নয়, রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী নদীতেও জলস্তর অনেকটাই বেড়েছে। আমতা ২নং ব্লকের উত্তর ভাটোরা, কুলিয়া এবং মীরগ্রামে তিনটি বাঁশের সেতু ভেঙে গিয়েছে। ফলে মূল ভূখন্ত থেকে কার্যত বিছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা দীপাঞ্চল। রবিবার ভোর থেকে উদয়নারায়ণপুরের তিনটি জায়গায় বাঁধ উপচে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে তাঁরা বস্তা ফেলে জল আটকানোর চেষ্টা করেন। পরে সেচদপ্তরের কর্মীরা গিয়ে বালির বস্তা ফেলে অবস্থা সামাল দেন। উদয়নারায়ণপুর বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ডিভিসি জল ছাড়ায় দু’-একটি জায়গা দিয়ে জল ঢুকলেও এখনই বন্যার আশঙ্কা নেই। রবিবার উদয়নারায়ণপুর ও আমতার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের মন্ত্রী পুলক রায়। এদিকে, শনিবার সকালে উদয়নারায়ণপুরে নদী বাঁধ পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য।
জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে খানাকুলের উদনা ও বালিপুরের মধ্যবর্তী বাঁশের সেতু। মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল পানশিউলি এলাকায় ঢোকায় ওই এলাকা থেকে সরানো হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। রূপনারায়ণও বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এই নদে জল বাড়লে শুধু খানাকুল ২নং নয়, বহু এলাকা ভেসে যাবে। দ্বারকেশ্বরে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় গোঘাটের ভাদুর ও আরামবাগ ব্লকের নদী সংলগ্ন এলাকার মানুষকে ত্রাণ শিবিরগুলিতে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আরামবাগে বৃষ্টির জমা জল বের করতে দমকল কর্মীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কিত ধনেখালি, তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। জাঙ্গিপাড়া এলাকায় রাজবলহাট ১ ও ২নং এবং রসিদপুর অঞ্চলে দামোদরের জল ঢুকে প্রায় ১৫০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০০ হেক্টর জমির ফসলও নষ্ট হয়েছে বলে জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির তরফে জানানো হয়েছে। তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায় বলেন, রবিবার জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কম থাকায় স্বস্তি ফিরেছে। বন্যা না হলেও তা প্রতিরোধে প্রস্তুতি চলছে গ্রামে।