বৃষ্টিতে ভেস্তে যাচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল, ক্ষুব্ধ ক্রিকেটপ্রেমীরা
‘দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, একমাত্র এবং এমন একটি অবিশ্বাস্য ম্যাচ ইংল্যান্ডে আয়োজন করা ঠিক হয়নি। সবচেয়ে ভালো হতো খেলাটা দুবাইয়ে হলে। যেখানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আবহাওয়া নিয়েও এমন চিন্তায় পড়তে হতো না।’ এই মন্তব্য ভারত কিংবা নিউজিল্যান্ড শিবিরের কারও নয়। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক কেভিন পিটারসেনের। এভাবেই তিনি তুলোধনা করেছেন আইসিসি’কে। ঠিকই বলেছেন কেপি। আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার। কারণ, এই ম্যাচের দিকে চোখ গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ভেস্তে গেল চতুর্থ দিনের খেলাও। যতই রিজার্ভ ডে থাকুক, এখন যা পরিস্থিতিতে তাতে ড্র হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বাকি দু’দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। তবে খারাপ আলোর কারণে ম্যাচে যে বিঘ্ন ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ম্যাচ অমীমাংসিত থাকলে যুগ্মভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে।
কিন্তু এটা তো চাননি ক্রিকেটপ্রেমীরা। সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন, দুই দলের ধুন্ধুমার লড়াই উপভোগ করার জন্য। এজিস বোলের গ্যালারিতে দর্শক সংখ্যা হাতে গোনা ঠিকই, কিন্তু যাঁরা দূর দূরান্ত থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে খেলা দেখতে আসছেন, সবচেয়ে বেশি হতাশ তাঁরা। আইসিসি এখন মুখ বাঁচাতে বলছে, রিজার্ভ ডে’তে টিকিটের মূল্য কমিয়ে দেবে। কিন্তু মরদেহে সুগন্ধি ছিটিয়ে আর লাভ কী!
বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনে একটা বলও খেলা হয়নি। এমনকী টস করতে নামার সুযোগ পাননি দুই দলের ক্যাপ্টেন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনেও মন্দ আলো ও খারাপ আবহাওয়ার দরুণ নির্ধারিত সময়ের আগেই খেলায় যবনিকা পড়েছিল। ইংল্যান্ডে এই সময় যে বৃষ্টি হয়, তা তো কারও অজানা নয়। আর প্রযুক্তির সাহায্যে এখন যে কোনও প্রান্তের আবহাওয়া এক মাস আগেই জেনে যাওয়া সম্ভব। আইসিসি’র মতো এত বড় মাপের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছে কি সাউদাম্পটনে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল না? নাকি তাঁরা চোখে ঠুলি বেঁধেছিলেন? নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘আল্টিমেট টেস্ট’ আয়োজনে পুরোপুরি ব্যর্থ আইসিসি।
হতাশা চেপে রাখতে পারেননি প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সুনীল গাভাসকর। তিনি বলেছেন, ‘পুরো মাঠ ঢাকার ব্যবস্থা করা হল না কেন? তাহলে এতটা সময় নষ্ট হত না। এটা তো আর যে সে ম্যাচ নয়। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। যেখানে দুই সেরা দলের লড়াই দেখার সুযোগ ছিল। কিন্তু জল ঢেলে দিল বৃষ্টি। ফুটবলে টাইব্রেকার কিংবা অন্যভাবে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হয়। টেনিসে পাঁচ সেটের পর টাইব্রেকারে ঠিক হয় চ্যাম্পিয়ন। এখানে সেই সুযোগ নেই। একটাই ম্যাচ। ড্র হলে যুগ্মভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। সেদিকেই এগোচ্ছে।’ উল্লেখ্য, বার্মিংহাম ছাড়া ইংল্যান্ডের আর কোনও মাঠে আচ্ছাদনের সুবিধা নেই।
বিরক্ত বিসিসিআই কর্তারাও। কিন্তু তাঁদের হাত-পা বাঁধা। বোর্ডের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল (WTC Final) প্রথমে হওয়ার কথা ছিল লর্ডসে। কারণ, ওয়ান ডে ফরম্যাটে বিশ্বকাপ প্রথম হয়েছিল ক্রিকেটের মক্কাতেই। কিন্তু ইংল্যান্ড যখন ফাইনালে উঠতে পারল না এবং করোনা পুনরায় মাথা চাড়া দিল, তখন ভেন্যু বদল করে আইসিসি। সাউদাম্পটনের মাঠের সঙ্গে হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে, তাই সেখানেই ডব্লুটিসি ফাইনাল আয়োজনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এক্ষেত্রে ভারত ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের কিছু বলার ছিল না। কারণ, এটা আইসিসি’র টুর্নামেন্ট।’