মাত্র ৪০ দিনে তিন কোটিরও বেশি শ্রমদিবস, নজির বাংলায়
মাত্র ৪০ দিনে ১০০ দিনের কাজে তিন কোটিরও বেশি শ্রমদিবস (labour day) তৈরি হল রাজ্যে। এপ্রিল মাসে ভোট থাকায় সেভাবে ১০০ দিনের কাজ হয়নি। গত ৫ মে তৃতীয়বারের জন্য শপথ নেওয়ার পর ১০০ দিনের কাজকে দ্রুতগতিতে করার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তার সাতদিন পরে ১২ মে দেখা যায়, মাত্র ৩৩ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। তবে সে সময় কেন্দ্রীয় সরকার কোনও টাকা বরাদ্দ করেনি। এমনকী বর্তমান আর্থিক বছরে শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে মাত্র ২২ কোটি করা হয়। যেখানে গত আর্থিক বছরে রাজ্যে ৪১ কোটি ৪১ লক্ষ ১৪ হাজার শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল। তার অর্ধেক বরাদ্দ করে আরেকবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার নজির সৃষ্টি হল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এরই মধ্যে গত ২৬ মে যশ ঘুর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার পর ২৭ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ প্রত্যেক দপ্তরের প্রধান সচিবদের সঙ্গে আলোচনায় বাঁধ মেরামতি, কৃষিজমি থেকে লোনা জল বের করা, রাস্তা মেরামতি সহ বিভিন্ন কাজে ১০০ দিনের শ্রমিকদের যুক্ত করার নির্দেশ দেন। পঞ্চায়েত দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এম ভি রাওকে বিশেষ নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের কাজে নামাতে হবে। সেই মতোই জোরদার কাজ শুরু হয়। একইরকম নির্দেশ দেওয়া হয় জেলাশাসকদেরও। সেচ, মৎস্য, কৃষি প্রভৃতি দপ্তরের কাজে লাগানো হয় ১০০ দিনের শ্রমিকদের। ফলে শ্রমদিবস বাড়তে শুরু করে। ৯ জুন দেখা যায় শ্রমদিবস প্রায় দু’কোটিতে পৌঁছে গিয়েছিল। সে সময়ই লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যায়।
পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ দিনে ১০০ দিনের এই কাজ আরও গতি পেয়েছে। মঙ্গলবার শ্রমদিবসের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ৫২ লক্ষ ৬৫ হাজার। আর কাজে যুক্ত হন ২৪ লক্ষ ১৭ হাজার মানুষ। প্রতিদিন তাঁরা মজুরি বাবদ পান ২০২ টাকা ৪৭ পয়সা। নিয়মানুযায়ী, কাজের গতি দেখে বরাদ্দ ধার্য করার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। এদিন পর্যন্ত কেন্দ্রের পাঠানো টাকার পরিমাণ হল ২৭৮ কোটি ৪৮ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। গ্রামের মানুষের হাতে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে পারিশ্রামিক বাবদ টাকা পৌঁছে দিতে চায় রাজ্য সরকার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, মানুষ যাতে কাজ পান। তার জন্যই ১০০ দিনের কাজকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো জেলায় জেলায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়ায় যশ পরবর্তী পুনর্গঠনের কাজে ১০০ দিনের প্রকল্পে যুক্ত শ্রমিকদের যেভাবে কাজে লাগানো হয়েছে, সেই ভাবে অন্য জেলায় কাজে লাগাতে হবে। ১০০ দিনের কাজে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি থেকে অনেক এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। প্রতি মাসে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে, তাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে জেলাগুলি। গত বছর করোনার জন্য লকডাউন চলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে যুক্ত করে বিকল্প পথে তাঁদের আয়ের সুযোগ এনে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও সেই পথেই হেঁটে বহু মানুষের উপার্জনের উপায় বের করতে তৎপর হয়েছেন তিনি।