সামাজিক প্রকল্পের জন্যই ভোট পেয়েছেন মমতা, মানল বামেরা
সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা ভোটে রাজ্যের মানুষ ‘বাংলার মেয়ে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই (Mamata Banerjee) তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছে। তৃণমূলের বিপুল জয় স্পষ্টভাবে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে। মমতার এই সাফল্যের পিছনে রাজ্যের মহিলা মহলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন যে প্রশ্নাতীত ছিল এবার দলীয় দলিলে সে কথা খোলাখুলি মেনে নিল সিপিএম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে গৃহীত নির্বাচনী ফলের পর্যালোচনা রিপোর্টে এব্যাপারে স্পষ্ট স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের মহিলা সংগঠন নিয়ে একসময় যথেষ্ট গর্ব করতেন সূর্যবাবুরা। সদস্য সংখ্যাও সে-সময় ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু গণসংগঠন হিসেবে গত ১০ বছরে মহিলা ফ্রন্টের ভূমিকায় সূর্যবাবুরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় এবার মহিলারা যেভাবে মমতাকে ঢেলে ভোট দিয়েছে তাতে এই ফ্রন্ট নিয়ে সিপিএমের (CPM) চিন্তা দ্বিগুণ হয়েছে।
স্বীকারোক্তির সুরে রাজ্য পার্টির দলিলে বলা হয়েছে, ‘… মহিলাদের ভোট ব্যাপক সংখ্যায় তৃণমূলের (TMC) পক্ষে গিয়েছে। মহিলা ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলের পক্ষে ভোটদানের বর্ধিত প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। রাজ্যে মহিলা নির্যাতনের সব ভয়ঙ্কর ঘটনা, তার অধিকাংশই অমীমানসিত, তা সত্ত্বেও মহিলাদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্প এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে কন্যাশ্রী-রূপশ্রী ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের অর্থপ্রদান এবং স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি এব্যাপারে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও তৃণমূলের হয়ে ভূমিকা পালন করেছে। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপি নেতৃত্বের কটূক্তি মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের বিবিধ জনহিতকর কর্মসূচির অহেতুক সমালোচনা যে দলের পক্ষে কার্যত ব্যুমেরাং হয়েছে তাও ঠারেঠোরে মেনে নিয়েছে সিপিএম। দলীয় দলিলে তারা স্বীকারোক্তির সুরে বলেছে, ‘তৃণমূল সরকারের কয়েকটি কল্যাণকর কর্মসূচি যেমন সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, দিদিকে বলো, দুয়ারে সরকার, পাড়ায় সমাধান প্রভৃতি এবং তার ব্যাপক প্রচার মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। এটা অস্বীকার করা যায় না। একে ‘ডোল’ বলে হাল্কা করে দেখা ঠিক হয়নি। ‘বেনিফিসিয়ারি’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তৈরি রাজনীতিকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করা যায়নি। উপকৃত অংশের মধ্যে প্রকল্পগুলির প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে।’
মহিলা ভোটের ক্ষেত্রে এবার যেভাবে বাম শিবিরকে আশাহত হতে হয়েছে তাতে যে দলের চিন্তা বেড়েছে তা মানছেন আলিমুদ্দিনের কর্তারাও। দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার কথায়, মমতার দুর্দান্ত জনপ্রিয়তার সামনে মহিলা ফ্রন্টের দুর্বলতা কাটানোর কোনও টোটকা এখন হাতের কাছে মিলছে না। এটা সত্যিই আমাদের কাছে উদ্বেগের। কারণ, রাজ্যে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই মহিলা।