রাজ্যের চাষিদের থেকে ধান কেনার প্রস্তাব কার্যত খারিজ কেন্দ্রের
সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ধান (Paddy) কেনার জন্য রাজ্য সরকার প্রস্তাব দিলেও কেন্দ্রীয় সরকার তা কার্যত উপেক্ষা করেছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কেনা ধানের উপরও নজরদারি শুরু করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই) সম্প্রতি এই উদ্দেশে উত্তর ২৪ পরগনার চারটি রাইস মিলে অভিযান চালায়। এই অভিযান সংক্রান্ত নোটে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। রাইস মিলগুলিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি চিহ্নিত করে তা রাজ্য খাদ্যদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার নজিরবিহীনভাবে রাইস মিলে অভিযান ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযানের পর খাদ্যদপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা এফসিআই কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়ে আলোচনায় বসেন। এই ধরনের উদ্যোগের জেরে যাতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কেনা ধান থেকে চাল উৎপাদন করতে কোনও সমস্যা না হয়, সেটা দেখতে বলা হয়েছে এফসিআই-কে।
চলতি খরিফ মরশুমে রাজ্য সরকারের ৪৬ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা আছে। মরশুম শুরু হওয়ার আগেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এফসিআই-কে ৬ লক্ষ টন ধান কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খরিফ মরশুমের অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরে এফসিআই ৫০ হাজার টন ধানও কেনেনি। সেখানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রায় ৪০ লক্ষ টন ধান কেনা হয়েছে।
এফসিআই সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘সেন্ট্রাল পুলে’ চাল সরবরাহ করার জন্য রাজ্য যে ধান সংগ্রহ করেছে, সে ব্যাপারে খোঁজখবর করা যেতেই পারে। সেন্ট্রাল পুলের থেকে চাল জাতীয় প্রকল্পের রেশন গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়। ওই চালের জন্য নির্ধারিত হারে খরচ দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। খাদ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, বনগাঁ, দেগঙ্গা এলাকার চারটি রাইস মিলে অভিযান চালিয়ে যে সব অসঙ্গতি ধরা হয়েছে, তার মধ্যে সেন্ট্রাল ও স্টেট পুলের ধান-চালের বস্তা কেন আলাদাভাবে রাখা হয়নি সেটাও আছে। ৪০ কেজির ধানের বস্তা কেন করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
রাইস মিল মালিকদের বক্তব্য, মিলে এভাবে আলাদা করে সেন্ট্রাল ও স্টেট পুলের ধান-চাল রাখা হয় না। বেঙ্গল রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক কম শ্রমিক নিয়ে অসুবিধার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে এখন দু’টি পুলের ধান-চাল আলাদা করে রাখা খুবই কঠিন কাজ। বস্তায় ৪০ কেজি ধান রাখার ব্যবস্থা এখানে নেই। এফসিআই পরিদর্শন রিপোর্টে ধানের বস্তা চিহ্নিত করার নম্বর না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বস্তার মান, যেভাবে বস্তা রাখা হয়েছে তা ঠিক নয় বলে জানানো হয়েছে। রাইস মিলগুলির লেজার বুকেও অসঙ্গতি আছে বলে জানানো হয়েছে।
খাদ্যদপ্তর সূত্রে আরও বলা হচ্ছে সেন্ট্রাল পুলের জন্য যে চাল রাজ্য সরকার সরবরাহ করে তার দাম মেটাত কেন্দ্রীয় সরকার। সব সময় এই খাতে প্রচুর টাকা বকেয়া থাকে। এই কারণে রাজ্য সরকারকে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে হয়।