কাল বিজেপির রাজ্য কমিটির বৈঠক, অশান্তির আশঙ্কা নেতাদেরই
আগামীকাল মঙ্গলবার বিজেপি’র (BJP) রাজ্য কমিটির বৈঠক। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর এই প্রথম গেরুয়া শিবিরের রাজ্য নেতারা আলোচনায় বসতে চলেছেন। তবে এই বৈঠক ঘিরে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে দলের রাজ্য কমিটির নেতাদের একাংশ। তাঁদের এমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ ভোটের আগে যখন দলীয় কর্মীরা চাঙ্গা ছিলেন, তখন টিকিট বিলিকে কেন্দ্র করে হেস্টিংস অফিসের সামনে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, হাতাহাতি কী না হয়েছে। ২০০ আসনের ঢক্কানিনাদ ৭৭-এ থমকে যাওয়ায় বিমর্ষ কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় দোষারোপের পালা। বাইরে আসে দলের অন্দরের কেচ্ছা। কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন থেকে দিলীপ ঘোষ— কাউকেই রেয়াত করেননি কর্মীরা। তাই কাল রাজ্য কমিটির বৈঠকে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা অমূলক নয়। সেই আঁচ পেয়েই বৈঠকে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রদবদল করেছে রাজ্য বিজেপি। প্রথমে ঠিক ছিল, সব জেলা সভাপতিকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। কিন্তু বৈঠকের মাঝে কেউ যদি ক্ষোভ উগড়ে দেন, সেক্ষেত্রে ছন্দপতন হবে বৈঠকের। তাই জেলা সভাপতিদের এই বৈঠকে ভার্চুয়ালি থাকতে বলা হয়েছে।
দলের একটা বড় অংশ মারাত্মক চটে রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর। সেই কারণে, দিল্লির নেতারাও রাজ্য কমিটির বৈঠকে সশরীরে থাকার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগতপ্রকাশ নাড্ডা ভার্চুয়ালি হাজির থাকবেন এই বৈঠকে। একইভাবে সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশও অংশ নেবেন বৈঠকে। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বৈঠকে থাকবেন কি না, রবিবার পর্যন্ত তা জানা যায়নি। এ প্রসঙ্গে দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ভোট চলাকালীন হেস্টিংস অফিসে প্রায় রোজই ক্ষোভ-বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছি আমরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তখন পুলিস মোতায়েন করতে হয়েছিল। আগামী কালের বৈঠকের কথা আমরা পুলিসকে জানিয়ে রেখেছি। যাতে হঠাৎ করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
হেস্টিংসে বিজেপি’র রাজ্য কমিটির এই বৈঠকে সশরীরে থাকবেন জনা পঞ্চাশেক নেতা। বাকি শ’দুশেক নেতা অংশ নেবেন ভার্চুয়ালি। জানা গিয়েছে, রাজ্য কমিটির প্রথম সারির পদাধিকারী এবং সাংসদরা হেস্টিংসের অফিসে আসবেন। এক্ষেত্রে একাধিক দলবদলু নেতার উপস্থিতি ভাবাচ্ছে দলের একাংশকে। সূত্রের খবর, তৃণমূল থেকে আসা এই নব্য বিজেপি নেতাদের ঘিরে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিতে পারে। যাঁদের নিয়ে ঝামেলার সম্ভাবনা, সেইসব নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের বোঝানো হয়েছে, এই ধরনের হঠকারি কাজ করলে আখেরে দলের ভাবমূর্তিই নষ্ট হবে। তাই অনেককেই মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই বৈঠকে কোনও সাংগঠনিক পরিবর্তন হলে তার প্রভাব কী হবে, তাও রাজ্য নেতাদের ভাবাচ্ছে। স্বভাবতই রাজ্য কমিটির বৈঠক ঘিরে গেরুয়া শিবির কার্যত আতঙ্কে ভুগছে।