উত্তরে ভাঙন অব্যাহত বিজেপিতে, তৃণমূলে আসার আবেদনের পাহাড় কোচবিহারে
কোচবিহার (Coochbehar) জেলার বিভিন্ন অঞ্চল পার্টি অফিসে বিজেপি (BJP) থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে (TMC) যোগদান করতে চেয়ে প্রচুর আবেদন জমা পড়ছে। স্থানীয় পর্যায়ে ওই সমস্ত আবেদন স্ক্রুটিনি করে আবেদনকারীদের ধীরে ধীরে দলে নেওয়া হচ্ছে। তবে বিজেপি নেতাদের নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উন্নয়নে শামিল হতে যেসব বিজেপি কর্মী ঘাসফুল শিবিরে আসতে চাইছেন, একটু বাছাই করে তাঁদের দলে নিতে চাইছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ (Rabindranath Ghosh) জেলায় লাগাতার যোগদান কর্মসূচি করে চলেছেন। তাঁর দাবি, জেলার অঞ্চল স্তরে যে পরিমাণ আবেদন জমা পড়েছে, তার সংখ্যা লক্ষের কাছাকাছি। জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় (ParthaPratim Ray) দাবি করেছেন, তাঁর কাছেও বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, তাদের কোনও কর্মী দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যাননি। কোচবিহারে তাঁদের ভিত মজবুতই রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, জেলার ১২৮টি অঞ্চলেই মূলত বিজেপি ও কিছু সিপিএম কর্মী আমাদের দলে যোগদান করার জন্য আবেদন করেছেন। যার সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ। সেসব আবেদনপত্র স্ক্রুটিনি করে যোগদান করাচ্ছি। আমি নিজেই বেশকিছু এলাকায় গিয়ে যোগদান করিয়েছি। করোনার কারণে আমরা যোগদান কর্মসূচি একটু ধীরে করছি। বিরোধী দলের নেতাদের থেকে সাধারণ কর্মীদের যোগদান করাচ্ছি বেশি। উত্তরবঙ্গকে রাজ্য থেকে আলদা করার যে চক্রান্ত করছে গেরুয়া শিবির, তার প্রতিবাদে অনেকেই বিজেপি ছেড়ে আমাদের দলে আসার জন্য আবেদন করছেন। পার্থবাবু বলেন, বিজেপি ছেড়ে আসার জন্য যে সংখ্যক আবেদন আমার কাছে জমা পড়েছে, তা প্রায় ১০ হাজার হবে। স্ক্রুটিনি করে তাঁদের যোগদান করানো হচ্ছে।
বিজেপির জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায় বলেন, ওরা বাজার গরম করতে ভিত্তিহীন খবর ছড়াচ্ছে। বিজেপির কোনও কর্মী তৃণমূলে যাবেন, এমন কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। আসলে ওদের সঙ্গে লোক নেই। হতাশ হয়ে ওই দলের নেতারা এসব বলছেন।
রবিবাবুর দাবি, নাটাবাড়ি বিধানসভা এলাকার পানিশালা অঞ্চল থেকে ৩০০ আবেদন জমা পড়েছে। দেওয়ানহাট অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ১৫০ জনকে দলে যোগদান করানো হয়েছে। আরও ৪০০টি আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। জিরানপুরে ১৫০ জনকে দলে নেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৩৫০টি আবেদন জমা পড়েছে। বলরামপুর-১ ও ২ অঞ্চলে বেশকিছু যোগদান করানো হয়েছে। আরও প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। দেউচরাই অঞ্চলেও প্রায় দু’হাজার আবেদন জমা পড়েছে। সিতাই বিধানসভার পেটলায় প্রায় দেড় হাজার আবেদন জমা পড়েছে। তিনি নিজে সম্প্রতি নাটাবাড়ি-১, ২, চিলাখানা-১, দেওয়ানহাট, পানিশালা, বলরামপুর, জিরানপুর, ধলুয়াবাড়ি প্রভৃতি জায়গায় বিজেপি কর্মীদের দলে যোগদান করিয়েছেন। জেলার অন্যান্য জায়গাতেও এই কর্মসূচি লাগাতার চলবে বলে রবিবাবুর দাবি।
তৃণমূল নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের এভাবে লাগাতার দলে যোগদান করানোয় জেলায় বিজেপি কার্যত চাপে রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে তারা ভালো ফল করলেও সামনেই জেলায় ছ’টি পুরসভায় নির্বাচন। সেইসঙ্গে দিনহাটায় উপনির্বাচনও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল এভাবে নিচুতলার কর্মীদের দলে টানলে বিজেপি সমস্যায় পড়তে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপি এসব তৃণমূলের হাওয়া গরম করা কথা বলে জানিয়েছে।