বার বার মামলা করে চাকুরীপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলায় ভর্ৎসনা মমতার
উচ্চ প্রাথমিকে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শূন্যপদে নিয়োগে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর এপ্রসঙ্গে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন, “যখনই নিয়োগ হচ্ছে, তখনই কোর্টে মামলা করে দিচ্ছে। ৩-৪ বছর ধরে এটা চলছে। যারা করছে, তারা অন্যায় করছে, যারা মামলা করছে, তারা কারা? সমাজের বন্ধু? এত ছাত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা উচিত নয়।”
গত ২১ জুন উচ্চ প্রাথমিকে ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করেছিল রাজ্য। নিয়ম মেনে তালিকা প্রকাশ হয়নি বলে অভিযোগ করে মামলা দায়ের করা হয়। তালিকায় দুর্নীতির অভিযোগ, এসএসসি-র নিয়মভঙ্গের অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের। তালিকা তৈরিতে স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলেন চাকরিপ্রার্থীরা। শুধু তাই নয়, কম নম্বর পেয়েও তালিকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। আর সেই মামলার শুনানিতে উচ্চ প্রাথমিকে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শূন্যপদে নিয়োগে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ।
কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা ছাড়া ২০১৬-র উচ্চ প্রাথমিকের শূন্যপদে ১৪ হাজার ৩৩৯ শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশিত হয় গত ২১ জুন। ওই দিনই আপার প্রাইমারি নিয়োগের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজোর আগেই রাজ্য সরকার উচ্চ প্রাথমিক ও প্রাথমিকে সাড়ে ২৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, পুজোর পরে প্রাথমিকে নিয়োগ করা হবে আরও সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষক। মোট ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হতে চলেছে রাজ্যে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুজোর আগে উচ্চ প্রাথমিকে ১৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে প্রাথমিকে নিয়োগ হবে সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষক। পুজোর পর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত, প্রাথমিকে আরও সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। কিন্তু তার দিনকয়েকের মধ্যেই ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
২০১৬ সাল থেকে চলা আপার প্রাইমারি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ তালিকায় অসংগতির অভিযোগে গতবছর হাইকোর্টে মামলা করেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। মামলকারীদের আইনজীবী দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় আদালতে দাবি করেন, নিয়োগ তালিকা অস্বচ্ছ। প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরাও সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন। বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্যরা।
গত ১১ ডিসেম্বর মামলার ভিত্তিতে ২০১৬ সাল থেকে চলা আপার প্রাইমারী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুনরায় নতুন করে ভেরিফিকেশন-সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া হয় প্রক্রিয়া শেষের সময়সীমাও।আদালতের নির্দেশ মতো গত ৪ জানু়য়ারি থেকে নতুন করে শুরু হয় ভেরিফিকেশন। ১০ মে-র আগে ইন্টারভিউ লিস্ট প্রকাশ ও ৩১ জুলাই-এর মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি-তে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা বিভাগে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ২০১৭ সালে পদের জন্য হয় নিয়োগ পরীক্ষা। পরের বছর অর্থাত্ ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত মেধাতালিকা। গত বছরের শুরু থেকে শুরু হয় শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া। প্রথম পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। প্যানেলে একাধিক অসংগতি ছিল বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।