মার্কিন মুলুক থেকে বাংলায় এল ১৬০টি ভেন্টিলেটর
আজ, ১ জুলাই প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিবস। এই মহান দিনের প্রাক্কালে বুধবার বাংলা ও বাঙালির মেলবন্ধনের ফলে সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে রাজ্যে এসে পৌঁছাল কয়েক কোটি টাকার ভেন্টিলেটর মেশিন। কোভিডের তৃতীয় ঢেউ ও তাতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে এই ১৬০টি অত্যাধুনিক ভেন্টিলেটর রাজ্যে আনার পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড’-এর (Bangla Worldwide) যৌথ ভূমিকার উল্লেখ না করলেই নয়। মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী একদল বাঙালি চিকিৎসক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় এই উদ্যোগ বাস্তব রূপ পেয়েছে বলে মানছেন সকলেই।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেনের অভাব নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল পড়েছিল। তা থেকে বাদ যায়নি এ রাজ্যও। সেই সঙ্কট কাটাতে মূলত অক্সিজেন প্লান্ট ও কনসেন্ট্রেটর জোগাড়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। তুলনায় নতুন ভেন্টিলেটর মেশিন কম কেনা হয়। এর মধ্যেই চিন্তা বাড়িয়েছে তৃতীয় ঢেউয়ের সতর্কবাণী। তখনই বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড-এর মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে আসে এই কাজে। ফলস্বরূপ এদিন সকালে কলকাতায় কন্টেনার বোঝাই হয়ে এসে পৌঁছেছে এতগুলি জীবনদায়ী ভেন্টিলেটর।
এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়, ডাঃ শিবাজি বসু, ডাঃ অশোকানন্দ কোনারের মতো বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। পরামর্শদাতা হিসেবে সংস্থার মাথায় রয়েছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও প্রাক্তন মুখ্যসচিব অমিতকিরণ দেব সহ একাধিক দুঁদে আমলা ও পুলিস কর্তা যুক্ত রয়েছেন এই সংস্থার সঙ্গে। তাঁদের উদ্যোগে বিশ্বের ১ হাজার ৩৪০টি ছোট-বড় শহরে বসবাসকারী প্রায় ৮০ শতাংশ বাঙালির সঙ্গে অনলাইন যোগসূত্র তৈরি করেছে সংস্থাটি। কোভিডের ভয়াবহতা অনুধাবন করে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টরা সম্প্রতি রাজ্যবাসীর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সুকুমারবাবুরা তাঁদের প্রবাসী বন্ধুবান্ধব, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সংস্থার পোর্টালকেই কাজে লাগান। যোগাযোগ হয় মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী বেশ কিছু বাঙালি চিকিৎসক ও তাঁদের তৈরি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে।
এমনই একটি সংগঠন ‘অস্মিনী’র কর্ণধার ডাঃ অমিত চক্রবর্তী বিশেষভাবে এগিয়ে এসে এরাজ্যে ভেন্টিলেটর পাঠানোর উদ্যোগ নেন। অমিতবাবুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওড়িশার আদি বাসিন্দা। তবে আদ্যন্ত বাঙালি। ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়, ডাঃ শিবাজি বসুর মতো চিকিৎসকদের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করে ঠিক করি, পশ্চিমবঙ্গের জন্য কিছু করব। তবে শুধু বাংলা নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও একইভাবে ভেন্টিলেটর দিয়ে সাহায্য করব। সুকুমারবাবু বলেন, জেলার সরকারি হাসপাতাল বা অস্থায়ী কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে আধুনিক সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যদপ্তরকে আমরা এই উদ্যোগে যুক্ত করি। মেশিনগুলি শহরে আনার ব্যাপারে ওরা সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে। আগামী রবিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে আমরা সরকারকে ৬০টি ভেন্টিলেটর হস্তান্তর করব। বাকি ১০০টি মেশিন যাবে বেসরকারি ও সেবামূলক সংস্থাগুলির কাছে।