ফুঁসছে তিস্তা, জলঢাকা ও মানসা নদী
আগেই আশঙ্কা ছিল। বুধবার সকাল হতেই সেই আশঙ্কা সত্যি হল। মঙ্গলবার রাত থেকে এদিন দুপুর পর্যন্ত একনাগাড়ে বৃষ্টিতে জলস্তর বাড়ায় তিস্তা (Teesta), জলঢাকা (Jaldhaka), মানসাই (Mansai) নদী রীতিমতো ফুঁসতে শুরু করে। যারজন্য সেচদপ্তর ওই তিন নদীতেই হলুদ সঙ্কেত (Yellow Alert) জারি করে। এছাড়াও ডায়না, কালজানি, তোর্সা নদীতেও উল্লেখযোগ্যভাবে জলস্তর বেড়েছে।
লাগাতার বৃষ্টিতে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন হয়। জেলায় অন্ততপক্ষে কয়েক হাজার বাড়িতে জল ঢুকে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিছু বাড়ি। কোনও জায়গায় ভারী বৃষ্টির জন্য মাটি নরম হয়ে গিয়ে উপড়ে গিয়েছে গাছ। জেলায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নাগরাকাটা, বানারহাট, ক্রান্তি ব্লকে। এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষার মরশুমের শুরু থেকেই প্লাবন পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত ব্লকস্তরের প্রশাসনিক কর্তারা। ফ্লাড রেসকিউ শেল্টারের ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে ত্রাণসামগ্রী। ত্রিপল সহ শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে অঞ্চলগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরিয়ে আনা হচ্ছে দুর্গতদের।
মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও নদীর জলস্তর বাড়তে থাকায় নাগরাকাটার খেরকাটা, আংরাভাসা-২ ও কলাবাড়িতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নাগরাকাটা থানার পিছনে ৫০-৬০টি বাড়ি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেটেলিতে কয়েকটি কালভার্ট ভেঙে গিয়েছে। মালবাজার শহরে একটি আন্ডারপাস সহ কয়েকটি জায়গায় হাঁটু সমান জল জমে রয়েছে। তিস্তার জল ঢুকে ক্রান্তি ব্লকের রাজাডাঙা, চ্যাঙমারি কিছু এলাকায় প্রায় ৫৫০টি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। বানারহাটে হাতিনালার জল বেড়ে গিয়ে সুকান্তপল্লি, ক্ষুদিরামপল্লি, হঠাৎকলোনির প্রায় ৪ হাজার বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। বানারহাটের বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতাজিপাড়ার শতাধিক বাড়িতে বুধবার বিকেলেও হাঁটু পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে ছিল।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, একদিকে পাহাড়ে, অন্যদিকে জেলায় টানা বৃষ্টিপাতে নদীর স্রোত বেশি থাকায় কয়েকটি জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। সেচ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের টিম গিয়ে সেই জায়গাগুলিতে বোল্ডার ফেলে মেরামত করার কাজ শুরু করে। মেটেলি, ময়নাগুড়ি, বানারহাট সহ কয়েকটি জায়গায় জল জমেছে। সেই জায়গায় দুর্গতদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে রান্নাঘর। যেখান থেকে দুর্গতদের খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেচদপ্তর সূত্রে খবর, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তিস্তায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে জলঢাকা নদীতেও জারি হয় হলুদ সতর্কতা। আর মানসাইতে সকাল ৯টায় হলুদ সঙ্কেত দেয় সেচদপ্তর। তবে দুপুরের পর জল কমায় ওই সঙ্কেত তুলে নেওয়া হয়। সেচদপ্তর জানিয়েছে, ডায়না, কালজানি, তোর্সা নদীতে কোনও সঙ্কেত জারি করা না হলেও জলস্তর বেড়েছে। পাহাড়ে বৃষ্টিপাত বাড়লেই জল বাড়তে থাকবে। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিস্তায় জল ছাড়া হয় প্রায় ১৪ হাজার কিউসেক। সেচদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, নদীর জলস্তর বাড়লেও এখনই চিন্তিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
তবে যেভাবে সিকিম সহ পাহাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে নদীর জল আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় বানারহাটে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল অনেকটাই বেশি। ৩৪২.২৫ মিমি সেখানে বৃষ্টি হয়েছে। মালবাজারে বৃষ্টি নথিভুক্ত হয় ২২০.৪২ মিমি। হাসিমারায় ২০৫ মিমি, মাথাভাঙায় ১৪৫, শিলিগুড়িতে ১০২.৪০, ময়নাগুড়িতে ৬৯, জলপাইগুড়িতে ৩৭.৮০, আলিপুরদুয়ারে ১১০.২০, কোচবিহারে ১১২.৬০, তুফানগঞ্জে ১০৮.৪০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। সেচদপ্তর আরও জানিয়েছে, গতবছরের তুলনায় এ বছর তুলনামূলকভাবে প্রায় ৪০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে জলপাইগুড়ি সদরে। গতবছর এ সময় জলপাইগুড়িতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৪১৯ মিমি। সেখানে এ বছর এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮৭৬.৬০ মিমি।