গঠনমূলক বিরোধিতা নয়, বিধানসভায় ‘গেরিলা হামলা’ চালাতে চায় বিজেপি
বিধানসভা নির্বাচনের ফলে স্বপ্নপূরণ না হলেও প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে বিজেপি(BJP)। বাম ও কংগ্রেস শূন্য বিধানসভায় দলের ৭৪ জন বিধায়ক। বিজেপি সূত্রে খবর, সেই শক্তি কাজে লাগিয়েই গেরিলা কায়দায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। সহকারী বানিয়েছেন দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গাকে। শুক্রবার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন নাকি ছিল তারই মহড়া। আর তাতে বিজেপি সফল বলেই মনে করছেন দলের নেতারা।
ঠিক কী ঘটেছিল শুক্রবার? বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ভাষণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে বলেই মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। রাজ্য মন্ত্রিসভার ঠিক করা ভাষণ রাজ্যপাল হুবহু পড়বেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। কারণ, তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, ভোট পরবর্তী পরিস্থিতির সঠিক তথ্য নেই ভাষণে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাও বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে সায় দেননি মমতা। এ সবের প্রেক্ষিতেই মনে করা হয়েছিল, বিধানসভার অধিবেশনে নবান্ন ও রাজভবন সঙ্ঘাতের আবহ আরও বাড়বে। এমনটাও মনে করা হচ্ছিল যে, রাজ্যপাল রীতি ভেঙে ভাষণ থেকে তাঁর অপছন্দের অংশ বাদ দিতে পারেন কিংবা কিছু জুড়েও দিতে পারেন।
কিন্তু এর কোনওটাই হয়নি। রাজ্যপাল ভাষণ শুরু করতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। মিনিট খানেকের মধ্যেই থেমে যেতে হয় ধনখড়কে। ফের শুরু করলে বিজেপি বিধায়কদের হইচই বাড়তেই থাকে। সকলের হাতে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগের পোস্টার, ছবি। সঙ্গে স্লোগান। ফলে ১৪ পাতার ভাষণ মাত্র কয়েক মিনিটেই শেষ করে দেন ধনখড়। বিধানসভা ছেড়ে ফিরে যান রাজভবনে।
কেন তিনি ভাষণ বন্ধ করলেন, সে ব্যাপারে রাজ্যাপাল কোনও মন্তব্য না করলেও এর মধ্যেই নৈতিক জয় দেখছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সরকারের লিখে দেওয়া ভাষণ পড়তে চাননি। সেটাই হয়েছে।’’ আর এক বিজেপি বিধায়কের দাবি, শুক্রবার বিক্ষোভ প্রদর্শনের গোটাটাই ছিল পরিকল্পনা মাফিক। কিন্তু সেটা ঠিক হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে। তিনি বলেন, ‘‘বিক্ষোভ যে দেখানো হবে, তা জানতাম না। বিধানসভায় যাওয়ার পরে আমায় বলা হয়। কী স্লোগান দিতে হবে, কখন আসন ছেড়ে ওয়েলে নেমে আসতে হবে সব বলে দেওয়া হয়। পোস্টারও দিয়ে দেওয়া হয়।’’
বিজেপি সূত্রে খবর, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুই এই পরিকল্পনা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন হাতে গোনা এক-দু’জন বিধায়ককে। বলা হয়েছিল, শাসক শিবিরের কেউ তো নয়ই এমন কী সংবাদমাধ্যমও যেন এই পরিকল্পনা টের না পায়। সেই মতো সবাই যখন রাজ্যপাল ভাষণে কী বলেন, তা শোনার বা দেখার অপেক্ষায়, তখনই তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। যেটা কেউ আগাম কল্পনা করেননি। পরিস্থিতি এমন হয় যে রাজ্যপাল ভাষণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
এই পদ্ধতিকেই ‘গেরিলা হামলা’ বলতে চাইছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরে শুভেন্দু অনুগামী হিসেবে পরিচিত এক নেতার দাবি, ‘‘সবে তো শুরু হল। আগামী পাঁচ বছর এই ভাবেই রাজ্য সরকারকে নাস্তানাবুদ করা হবে। বিধানসভায় অনেক বেনিয়ম চলেছে গত ১০ বছরে। এ বার সেটা অত সহজ হবে না।’’
বিজেপি যা পরিকল্পনা করেছে তাতে বিধানসভার অধিবেশনে এমন আচমকা হামলা চালানোর পাশাপাশি বিরোধী দলের বিধায়কদের কথা বলার সুযোগ আদায়ের জন্যও লড়াই চালাবে পরিষদীয় দল। দলবদল করা মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের দাবি থেকে বিভিন্ন কমিটিতে দলের বিধায়কদের জায়গা পাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই তৎপর বিজেপি। এর পরে অধিবেশনে প্রশ্ন তোলা থেকে বিতর্কে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রেও দলের বিধায়কদের সক্রিয় রাখার পরিকল্পনা নিয়েছেন শুভেন্দু। সেই লক্ষ্যে শনিবার সারা দিনের জন্য বিধায়কদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছেন তিনি। সেখানে মূলত বিধানসভার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে সচেতন করা হবে বিধায়কদের। তবে বিধানসভার অন্দরে কবে, কোন পথে হবে আন্দোলন সেটা ঠিক করবেন শুভেন্দু একাই। সঙ্গী হবেন মনোজ। বাকিরা জানবেন শেষবেলায়। শুক্রবার এমন পরিকল্পনার ইঙ্গিত মিলেছে শুভেন্দুর গলাতেও। বিধানসভায় কেমন ভূমিকা হবে বিজেপি-র? সংবাদমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আজকেরটা আজ করেছে। এর পরে যেদিন যেটা হবে, সেদিন সেটা বলে দেব।’’