রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

নোনা জলে ডোবা জমিতে ধান চাষের উদ্যোগ কৃষি দপ্তরের

July 4, 2021 | 2 min read

‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়!’ এই আপ্তবাক্যকে সত্যি করে তুলতে উদ্যোগী রাজ্য কৃষিদপ্তর। রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলির বিস্তীর্ণ চাষের জমিতে নোনাজল ঢুকে যায় সাম্প্রতিক ‘যশ’ ঘূর্ণিঝড়ের সময়। তারপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, ধান চাষ না করতে পারলে মানুষ বিরাট সমস্যার মধ্যে পড়বে। তাই অল্প নোনা জমিতেও যে ধরনের ধান চাষ করা যেতে পারে, সেই জাতের বীজ সরবরাহ করা হোক। এই মরশুমে ওইসব জমিকে চাষযোগ্য করে তুলতে যা যা করা দরকার, সবটাই করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো ইতিমধ্যেই রাজ্যের তিন উপকূলবর্তী জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ১২৯০ মেট্রিক টন নোনা স্বর্ণ ধানের বীজ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। এর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। এই পরিমাণ বীজধানে প্রায় ২ লক্ষ বিঘা জমিতে ফের আবাদ করা যাবে বলে মনে করছেন কৃষিদপ্তরের কর্তারা। প্রতি বিঘা জমির জন্য ছ’কেজি হিসেবে দেওয়া হয়েছে বীজধান।


এর পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে ১৮৪০টি বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কীভাবে এই নোনা স্বর্ণ ধানের চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হবেন, সেই বিষয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কৃষিদপ্তর। নোনা সুবর্ণ, নোনাশ্রী, ধীরেন, দুধেশ্বর, কলমা, গোসাবা-১—নোনা স্বর্ণ বিভাগের মধ্যে থাকা এরকম মোট ছ’টি প্রজাতির ধানচাষে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। দুর্গত এলাকার ব্লক কৃষি আধিকারিকরা নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।


প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের উম-পুন ঘূর্ণিঝড়ের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের চোখে দেখে এসেছিলেন কৃষকদের দুর্দশা। সেদি‌ন‌ই তিনি সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক এবং কৃষিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেভাবেই হোক কৃষকদের এই সমস্যা মেটাতে হবে। নোনা জল সরে গেলেই কৃষকরা যাতে সেই জমিতে দ্রুত চাষ শুরু করতে পারেন, তার জন্য উপযুক্ত ধানের বীজের খোঁজ করতে বলেন তিনি। এছাড়া, জল নামার পরই লাঙ্গল দিয়ে নীচের মাটি উপরে এনে যতটা সম্ভব জমির নোনাভাব কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই বছরই কৃষিবিজ্ঞানীরা এক ধরনের ধানের সন্ধান পান, যা অপেক্ষাকৃত কম নুনযুক্ত জমিতে চাষ করা যাবে। এবার ‘যশ’ পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের কৃষিদপ্তরকে সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশের এক মাসের মধ্যেই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিল কৃষিদপ্তর। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নোনা স্বর্ণ ধানের ভ্যারাইটি আমরা তৈরি করেছি, যা কৃষকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই বিলি করা হয়েছে। এরফলে উপকৃত হয়েছেন বহু কৃষক। কৃষকদের জন্য নানা অনুকূল প্রকল্প নিয়ে এই সরকার তাঁদের পাশে আছে।


এদিকে, রাজ্য সরকারের সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ জুন কৃষকবন্ধু প্রকল্পের উদ্বোধনের পর মাত্র ১৫ দিনে এই প্রকল্পে প্রায় ৬২ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছে প্রথম কিস্তির পাঁচ হাজার টাকা। খরিফ মরশুমের এই কিস্তির জন্য খরচ হয়েছে মোট ১৮০০ কোটি টাকা। পরের কিস্তির টাকা দেওয়া হবে এই বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। রাজ্য সরকার এভাবে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনের পথে এগলেও রাজ্যের অধিকাংশ কৃষক এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কৃষক-সম্মাননিধি প্রকল্পের বকেয়া টাকা পাননি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Cultivation, #paddy, #Agriculture Department

আরো দেখুন