দেশ বিভাগে ফিরে যান

দেবাঞ্জনের ছবি নিয়ে ব্যস্ত বিজেপি, চুপ নীরবের সাথে নরেন্দ্র মোদীর ছবি নিয়ে? উঠছে প্রশ্ন

July 5, 2021 | 3 min read

সম্প্রতি টিকা জালিয়াতি(Fake Vaccine) নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ঘটনাটি আর রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে বললে ভুল হবে। জল গড়িয়েছে দিল্লি অবধি। বিজেপির (BJP) কেন্দ্রীয় নেতারা পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়ই চিন্তিত হয়ে উঠেছেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। কারণ দেবাঞ্জনের সাথে যত্র তত্র ছবিতে দেখা গেছে রাজ্যের শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের। বিজেপির দাবি টিকা কাণ্ডের মাথা দেবাঞ্জনের (Debanjan Deb) সাথে যোগসাজস আছে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের।

প্রসঙ্গত, টিকা জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার সাথে সাথেই দেবাঞ্জনকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য সরকার। জালিয়াতির ঘটনা ফাঁসও করেছেন এক তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty)।

কিন্তু দেশের সব থেকে বড় জালিয়াতি নীরব মোদী মামলার তিন বছর কেটে গেলেও এখনও অধরাই নীরব মোদী। দেশে ফেরানো যায়নি তাঁকে। বা ইচ্ছাকৃত দেশে ফেরানো হয়নি। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন এবিষয়ে এখনও চুপ কেন বিজেপি নেতারা? বিরোধীরা বিভিন্ন সময়ে নীরব মোদী এবং বিজেপির যোগ থাকার অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপির দুঁদে নেতা, এমনকি দেশ ছাড়ার পরেও স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) সাথে একই ফ্রেমে দেখা গেছে নীরব মোদীকে (Nirav Modi)। প্রায় সাড়ে এগারো হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি করে কী করে একজন পার পেয়ে গেল? তা নিয়ে কেন কোন মাথা ব্যাথা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের নেতা মন্ত্রীদের? তাঁরা কেন রাজ্যের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন? কোন বড় ঘটনা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছেন না তো! প্রশ্নগুলি অব্যহত। বিরোধীদের দাবি আগে নরেন্দ্র মোদী- নীরব মোদী কেসের তদন্ত হোক। তারপর ওনারা অন্য বিষয় নিয়ে ভাববেন।

ফিরে দেখা যাক ইতিহাস

রাফায়েল-বিতর্ক মিটতে না মিটতেই ২০১৮ সালে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতির মতো আরও এক দুর্নীতির খবর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ভারতে। রাফায়েলের মতো এই দুর্নীতির ক্ষেত্রেও বিরোধীরা সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে। কারণ, বিরোধীদের অভিযোগ, জালিয়াতির খবর জানানো চিঠি পাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী দু বছর ধরে কোনো ব্যবস্থা নেননি। যার দরুন এই জালিয়াতির প্রধান পান্ডাসহ অন্যরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেই নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে বসেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ সামনে আসায় বিশ্বাসঘাতকতার আগুনে পুড়েছিল গোটা দেশ। যারা তাঁকে বিশ্বাস করে ভোট দিয়েছিলেন।

ব্যাংক জালিয়াতির পান্ডা নীরব মোদী আদতে গুজরাটের মানুষ। ৪৭ বছরের এই হীরার ব্যবসায়ী মুম্বাইয়ে ঘাঁটি গেড়ে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ভুয়ো কাগজপত্রের মাধ্যমে ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা জালিয়াতি করে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বিদেশ পালিয়ে যান। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর স্ত্রী, ভাইসহ ব্যবসার অন্য মাথারাও দেশত্যাগী হন। নিয়ম ভেঙে এই বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়ার কাজে তাঁর সহায়ক ছিলেন ওই ব্যাংকেরই এক কর্তা। যিনি ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছিলেন।

২০১১ সাল থেকে এই জালিয়াতি শুরু হলেও তা ধরা পড়তে কী করে সাত বছর সময় লাগল, বিস্ময় সেখানেও। দেশত্যাগের পর সুইজারল্যান্ডের দাভোসে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে নীরব মোদীও উপস্থিত ছিলেন। সেই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর বিরোধীরা সরাসরি দুই মোদীর মধ্যে যোগসাজশের অভিযোগ তোলে।

বিরোধীদের যুক্তি আরও পোক্ত হয় নীরবের একসময়ের এক ব্যবসায়ী সঙ্গীর চিঠিতে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এক চিঠি লিখে ওই ব্যবসায়ী এই জালিয়াতির বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু দু বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জালিয়াতির আঁচ পেয়ে ঋণ বন্ধ করে দেয়। নীরব মোদীও সপরিবার ও সবান্ধব পালিয়ে যান।

এর আগেও জালিয়াতি করে দেশত্যাগী হয়েছেন আইপিএল-খ্যাত ললিত মোদী। ললিতের সঙ্গে সখ্য ছিল বিজেপির রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। এরপর জালিয়াতি করে দেশত্যাগী হন শিল্পপতি বিজয় মালিয়া। অভিযোগ, তাঁর দেশত্যাগেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন শাসক দলের কেউ কেউ। কিন্তু কোনো অভিযোগই দাগ কাটতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তিতে। কিন্তু নীরব মোদীর জালিয়াতি ও পিঠটান দেওয়ার পর প্রথম বিপাকে পড়েন নরেন্দ্র মোদী। এই দুর্নীতির দায় আজও গলার কাঁটার মতো বিঁধে আছে তাঁকে। কারণ তাঁর মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিজেপি সরকারের দুর্নীতির তালিকা হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। আর তার মধ্যে সব চেয়ে বড় এই নীরব মোদী মামলা, যা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিজেপি নেতারা। টিকা জালিয়াতি নিয়ে যারা পথ অবরোধ থেকে আন্দোলনে নেমেছেন, দেশের সম্পত্তি অন্য দেশে পাচারে একটি শব্দও বেরোয়নি তাদের মুখ থেকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#debanjan deb, #Narendra Modi, #bjp, #Nirav Modi

আরো দেখুন