ছোট অঙ্কের ঋণ নিয়ে ব্যবসায় দেশের সেরা বাংলাই
করোনার থাবায় মানুষের রোজগার তলানিতে। তবু ছোটখাট ঘরোয়া ব্যবসা করে বেঁচে থাকার পথ দেখাচ্ছে বাংলা। গত আর্থিক বছরে ছোট অঙ্কের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার যে প্রবণতা, তাতে দেশের সেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) রাজ্য। ব্যাঙ্ক হোক বা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান— ধার করে পুঁজি জোটানোয় দেশের সেরা দশ জেলার তালিকাতেও সিংহভাগ দখলে রেখেছে এখানকার জেলাগুলি, বলছে রিপোর্ট।
ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন মাইক্রোফিনান্স ইনস্টিটিউশনস নেটওয়ার্ক বা ‘অ্যামফিন’ গত আর্থিক বছরে নেওয়া ঋণের উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মোট ঋণ এবং মাথাপিছু ঋণের হিসেবে এরাজ্য সবার আগে রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত আর্থিক বছরে এরাজ্যে ঘরোয়া কারবারে ইচ্ছুক বাসিন্দাদের মোট ৩৯ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। বাংলার পর জায়গা নিয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে বিহার ও কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্র।
এ তো গেল সার্বিক ঋণের অঙ্ক। মাথাপিছু ঋণের হিসেবে চোখ রাখলে দেখা যাবে, এখানে অর্থাৎ বাংলায় গড়ে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৫৮ হাজার ৮৪৪ টাকা। এই অঙ্কের ধারে কাছে নেই অন্য কোনও রাজ্য। দ্বিতীয় স্থানে আছে অসম। তাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৪৯ হাজার ৬৮২ টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওড়িশা, যেখানে মাথাপিছু ঋণ মিলেছে ৪১ হাজার ৮৯৮ টাকা। অ্যামফিনের রিপোর্ট বলছে, গত আর্থিক বছর শেষে দেশে মোট ক্ষুদ্র ঋণের অঙ্ক ছিল ২.৬ লক্ষ কোটি টাকা। ৫.৯৩ কোটি মানুষ ওই ঋণ নিয়েছেন। ঋণের প্রায় ৪৪ ভাগ এসেছে ব্যাঙ্ক থেকে। বাকি ঋণের বেশিরভাগটাই দিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক সংস্থা।
ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলির আরেকটি সংগঠন ‘সা-ধন’-এর তথ্য বলছে, ছোট অঙ্কের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের সেরা দশটি জেলার মধ্যে বাংলার দখলে রয়েছে ন’টি। গত আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসের হিসেব অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ঋণে সেরা দশটি জেলা হল উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, নদীয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, কোচবিহার এবং মাইসুরু। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। সেখানে মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর মুর্শিদাবাদ ও জলপাইগুড়িতে ঋণ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ৩ হাজার ৩৩৪ কোটি এবং ৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। ‘সা-ধন’এর তথ্য বলছে, এরাজ্য যে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছে, তাও মূলত ব্যাঙ্ক নির্ভর। কারণ, ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের নিরিখে দেশের সেরা দশটি জেলার মধ্যে এরাজ্যের ন’টি জেলা হাজির। দশম জেলাটি ত্রিপুরার। এক্ষেত্রেও সেরা উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে মোট ঋণ পৌঁছেছে ৩ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ছোট অঙ্কের ঋণ (Loan) নিয়ে ব্যবসা করার প্রবণতা সব সময় বেশি থাকে গ্রামগুলিতে। এক্ষেত্রে কোনও রাজ্যে ঋণের টাকা বেশি পৌঁছনোর অর্থ সেখানকার গ্রামীণ অর্থনীতির প্রসার। গ্রামের মানুষের হাতে টাকা আসার অর্থ অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশ। হিসেব বলছে, বাংলার জেলাগুলির বাসিন্দাদের হাতে সর্বাধিক ঋণ পৌঁছেছে। তাই আর্থিক কর্মকাণ্ডে দেশকে দিশা দেখাচ্ছে বাংলা।