নতুন সাজে স্টল পেয়ে যশ-বিধ্বস্ত দীঘার দোকানদাররা আপ্লুত
যশ ঘূর্ণিঝড়ে (Yaas Cyclone) দীঘায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের স্টল (Stall) সারিয়ে তাঁদের হাতে তুলে দিল রাজ্য। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে ব্যাপক খুশি দীঘার দোকানদাররা। দীঘায় বিভিন্ন মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ১১৪টি স্টল সারানোর পর এদিন ক্ষতিগ্রস্তদের তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৫২ জনকে ভ্রাম্যমাণ স্টল দেওয়া হল। ভ্রাম্যমাণ স্টলের মডেল দেখে খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ৭০লক্ষ টাকা খরচ করে দীঘার ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের পাশে দাঁড়াল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টেয় নবান্ন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থার অফিসের সামনে মঞ্চ বেঁধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান করা হয়। সেখানে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, পুলিস সুপার অমরনাথ কে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখেই দীঘার নেহরু মার্কেটের খাবারের দোকানদার শিবানী জানার হাতে ভ্রাম্যমাণ স্টল তুলে দেওয়া হয়। শিবানীদেবী বলেন, রাজ্য সরকার পাশে না থাকলে সব শেষ হয়ে যেত। সাইক্লোনে অস্থায়ী দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। এখন ভ্রাম্যমাণ স্টল পেয়ে আবারও জীবন জীবিকার জন্য লড়াইয়ে নামব। মুখ্যমন্ত্রীকে এজন্য ধন্যবাদ জানাব। একই বক্তব্য বিধানচন্দ্র রায় ফ্যান্সি মার্কেটের দোকানদার স্বপন মাইতি ও বাদল দাসের। তাঁরা বলেন, সাইক্লোনে স্টল ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্টল সারিয়ে দিয়েছে। মহামারী এবং সাইক্লোনের জোড়া ধাক্কায় আমাদের অবস্থা শোচনীয়। এই অবস্থায় সরকার পাশে দাঁড়ানোয় আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে উৎসাহ পেলাম।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দীঘা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্র। ২০১১ সালের পর থেকে দীঘাকে আমরা সাজিয়ে তুলেছিলাম। কিন্তু, যশ, ফণী, উম-পুন সহ চারটি ঘূর্ণিঝড় সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। আমরা লং টার্ম, শর্ট টার্ম এবং মিড টার্ম পরিকল্পনা করেছি। ঝড়ের আগে ২৮ মে আমি দীঘায় গিয়েছিলাম। সাইক্লোনের তাণ্ডবে যেসব দোকানঘর পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাদের সবকিছু ঠিকঠাক করে দিচ্ছি। এটা শর্ট টার্ম। মিড টার্মে আমরা ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ স্কিম হাতে নিয়েছি। লং টার্মের জন্য মাস্টার প্ল্যান করা হবে। ২৪ জন সদস্য নিয়ে একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সুন্দরবন এবং দীঘাকে সাজানোর জন্য এই মাস্টার প্ল্যান নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের কাছে আমরা ৩৬৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পৌঁছে দিয়েছি। সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে গিয়েছে। আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য কেন্দ্রের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিলাম। ওরা ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছিল। সেটাও রাজ্যের পাওনা টাকা। আমরা নিজেরা এক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। উল্লেখ্য, ওল্ডদীঘা এবং শঙ্করপুরে অস্থায়ী ছাউনির মধ্যে অনেক দোকানদার জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। ওই দোকানদাররা স্থায়ী স্টল পাওয়ার লিস্টে ওয়েটিংয়ে ছিলেন। দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁদের মধ্যে ৫২ জনকে ভ্রাম্যমাণ স্টল বানিয়ে দেওয়া হল। এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় তাঁরা সৈকত সরণি থেকে স্টল নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। গত ২৬ মে সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত দীঘা নিউ সি সেল মার্কেটে ৩০টি, সি-হক ঘোলা মার্কেটে ১২টি, বিধানচন্দ্র রায় ফ্যান্সি মার্কেটে ১৫টি, বিশ্ববাংলা-২নম্বর মার্কেটে ১৫টি, দিশারি মার্কেটে একটি এবং ব্যক্তিগত জায়গায় উপর থাকা আরও ৩৩টি স্টল সারিয়ে দিয়েছে ডিএসডিএ।