মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে সংসদে মোদী সরকারকে চাপে ফেলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল
সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল (Women Reservation Bill) আনার দাবিতে সরব হতে চলেছে তৃণমূল। দলের বক্তব্য, এখন ওই বিল আনার আদর্শ পরিস্থিতি রয়েছে। তাই বিজেপির উচিত চলতি অধিবেশনেই ওই বিল নিয়ে আসা। এ দিকে বিরোধী দলগুলির পারস্পরিক সংঘাত থাকার জন্য সংসদে বিজেপি-বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেওয়া তৃণমূলের পক্ষে অপেক্ষাকৃত সহজ হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
কৃষক আন্দোলন থেকে শুরু করে পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলিকে সামনে আনার জন্য চিহ্নিত করেছেন তৃণমূল নেতৃত্বে। একুশ জুলাই রাতে দিল্লি পৌঁছচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরের সপ্তাহে দিল্লি উপস্থিত থাকবেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দলের বক্তব্য, সদ্য পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজেপিকে বড় ভাবে হারানোর পরে এমনতিই মনোবল তুঙ্গে তৃণমূলের। তাঁদের উপর নজর থাকবে সব দলের। কিন্তু সেটাই সব নয়। আরও কিছু কৌশলগত কারণে, বিজেপি-বিরোধিতায় তৃণমূলের নেতৃত্ব সবচেয়ে কার্যকর এবং সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গত কাল অকালি দলের রাজ্যসভার নেতা নরেশ গুজরালের সঙ্গে কথা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের। নরেশ জানিয়েছেন, তাঁরা কৃষি বিল এবং কৃষক আন্দোলন নিয়ে সরব হতে চান সংসদের দু’টি কক্ষে। ডেরেক তাঁকে জানিয়েছেন, কৃষি বিল নিয়ে সংসদে প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিল তৃণমূলই। আসন্ন অধিবেশনেও রাজ্যসভায় বাকিদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলই বিষয়টিতে নেতৃত্ব দেবে। নরেশকে বুঝিয়ে এটাও বলা হয়েছে যে, রাজ্যসভায় তিন এবং লোকসভায় মাত্র চার জন সাংসদ নিয়ে অকালির পক্ষে আলাদা ভাবে বেশি দূর পর্যন্ত আওয়াজ তোলা সম্ভব নয়।
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, অকালি, আপ এবং এসপির মতো দলগুলির বিভিন্ন রাজ্যে লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে, তৃণমূলের সঙ্গে নয়। তা ছাড়া আপ বা এসপি নেতৃত্বের সঙ্গে মমতার সুসম্পর্ক সুবিদিত। ফলে কংগ্রেসের তুলনায় সমস্ত বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় করা তৃণমূলের পক্ষে অনেক সহজ। তৃণমূল কোনও বিষয়ে নোটিস আনলে, তাতে সই করা এসপি, আপ, অকালির মতো দলগুলির পক্ষে রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক।
রাজ্যসভায় আরও একটি সুবিধা রয়েছে বলে ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে তৃণমূল। তা হল, কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে অথবা জয়রাম রমেশদের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ভাল। ফলে আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধিতার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় তৃণমূল বেশি স্বচ্ছন্দ। লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী এর আগের অধিবেশনেও তৃণমূল বিরোধিতা করেছিলেন।
শাসক শিবিরের উপর চাপ বাড়াতে মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল আনার প্রশ্নেও সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ ডেরেক বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলিতে মহিলাদের উপস্থিতি মাত্র ১৪ শতাংশ। বিজেপিতে লোকসভা ও রাজ্যসভায় মহিলাদের উপস্থিতি মাত্র ১৪ ও ১১ শতাংশ। বিজেপি যে হেতু দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই সরকারের উচিত ওই বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া।’’ তৃণমূলের দাবি, লোকসভা ও রাজ্যসভায় তাদের দলের মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা যথাক্রমে ৪১ ও ৩৬ শতাংশ।