বাংলায় ভোটে বিপর্যয়, নেতাজীর জন্মজয়ন্তী পালনে বিজেপির অনীহা
বাংলা দখলের লক্ষ্যে বাঙালির আইকন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে (Subhas Chandra Bose) নিয়ে ভোটের আগে স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। কিন্তু নির্বাচনে পর্যুদস্ত হওয়ার পর সেই নেতাজীকেই কার্যত ভুলতে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের বিরুদ্ধে নেতাজীর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরে চরম উদাসীনতার অভিযোগ উঠল। বর্ষব্যাপী উদযাপনের যে ঘোষণা করা হয়েছিল, তা রয়ে গিয়েছে কাগজে-কলমেই। কেন্দ্রীয় সরকার সুভাষচন্দ্রকে দেশবাসীর কাছে আরও ‘জীবন্ত’ করে তুলতে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশের গণ্যমান্য ৮৫ জন ব্যক্তিকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল হাই পাওয়ার কমিটি। গত বছর ১৫ ডিসেম্বর সেই কমিটির প্রথম ও সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। তারপর সাত মাস কেটে গেলেও নেতাজীর জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরে উচ্চবাচ্য করেনি মোদী সরকার। তবে গত ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সুভাষচন্দ্র বসুকে ঘিরে বিরাট কর্মকাণ্ডের আয়োজন করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠানে প্রায় চার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। সেখানেই মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে বছরভর নেতাজীর জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।
কিন্তু ঘোষণাই সার। দেশের অন্যতম সেরা এই বিপ্লবীকে নিয়ে সশরীরে বা ভার্চুয়াল কোনও বৈঠকই করেননি মোদী-শাহরা। উল্লেখ্য, চলতি বছরে ভিক্টোরিয়ায় নেতাজীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপনের সেই অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিধানসভা ভোটের অন্যতম ইস্যু। কারণ, ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষণ দিতে উঠলে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলে বিজেপি কর্মীদের একাংশ। এ প্রসঙ্গে নেতাজী পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসু বলেন, ভোটে তৃণমূল ওই ঘটনার ডিভিডেন্ড পেয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত মুখ্যমন্ত্রী এভাবে অপমানিত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভালোভাবে নেননি। ওই ঘটনায় নেতাজীকেও কার্যত অপমান করা হয়েছিল বলে মনে করেন চন্দ্রবাবু।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ওই হাই পাওয়ার কমিটির সদস্যরা হলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মিঠুন চক্রবর্তী, শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির (BJP) একাধিক এমপি সহ বহু মানুষ। সাত মাসে কেন একটিও বৈঠক হল না? জবাবে চন্দ্র বসু বলেন, করোনার ছুতো দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভার্চুয়াল বৈঠক তো করা যেত। তাও তো হয়নি। করোনা আবহে বাংলায় আট দফায় ভোট হতে পারলে দু’-একটা বৈঠক না হওয়ার ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না চন্দ্রবাবু।
জানা গিয়েছে, গত ১৪ এপ্রিল ছিল মইরাং দিবস। ওই দিনে মণিপুরের ওই ঐতিহাসিক স্থানে ব্রিটিশ ফৌজ পরাজিত হয়। সেদিনই সেখানে আজাদ হিন্দ সরকারের পতাকা উড়েছিল। চলতি বছর এই দিনটি কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্ব দিয়ে পালন করেনি। আগামী ২১ অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠান রয়েছে। সেটি আদৌ মোদী সরকারের ব্যবস্থাপনায় উদযাপন করা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ভোটের আগে বাঙালি প্রীতির জিগির তুলতেই মোদী-শাহরা নেতাজীকে নিয়ে বাড়তি উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটে হেরে গেরুয়া পার্টি কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছে। চন্দ্র বসুর কথায়, নেতাজীকে নিয়ে দিল্লি সরকারের যাবতীয় ঘোষণা কার্যত হিমঘরে চলে গিয়েছে।