দলীয় কর্মসূচির অভাব, নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের
রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে না পারায় বিজেপির (BJP) নিচুতলার নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে দলীয় কর্মসূচিও কার্যত লাটে উঠেছে। ফলে শিলিগুড়িতে দলের জেলা নেতৃত্বের ছন্নছাড়া অবস্থানে পদাধিকারী সহ বহু নেতাকর্মী বিজেপি ছাড়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন বলে সূত্রের খবর।
বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির এক পদাধিকারী বলেন, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে জেলা নেতৃত্ব নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। সেভাবে কোনও কর্মসূচি নেই। এই পরিস্থিতিতে জেলা কমিটির পদাধিকারীদের উপেক্ষা করে বিধায়করা নিজেদের মর্জিমতো সবকিছু করছেন। এটা দলের রীতি বিরোধী এবং সংগঠনের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু, বলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। তাই অনেকেই দল ছাড়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।
বিজেপির মণ্ডল স্তরেও এ নিয়ে ক্ষোভ, অসন্তোষ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, ভোটের ফল প্রকাশের পর জেলা সভাপতি বা জেলা কমিটির কোনও পদাধিকারী মণ্ডল স্তরের নেতাকর্মীদের কোনও কর্মসূচি দিতে পারেনি। এই নিষ্ক্রিয়তায় সাধারণ মানুষ বিজেপির কথা ভুলতে বসেছে।
শিলিগুড়িতে (Siliguri) বিজেপির মণ্ডল কমিটির এক পদাধিকারী বলেন, সাধারণ মানুষের সামনে আমরা যেতে পারছি না। করোনাকালে গরিব মানুষ সমস্যায় রয়েছে। ভোটের আগে এদেরই অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। করোনা মহামারীতে ওইসব মানুষ এখন সঙ্কটে পড়ে আমাদের কাছে আসছেন। কিন্তু, কিছু করতে পারছি না। নেতাদের তরফে করোনা সঙ্কটে জর্জরিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে একপ্রকার পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এভাবে বিজেপি করা যাবে না।
আরএক মণ্ডল সম্পাদক বলেন, দেখছি হঠাৎ করে আমাদের বিধায়করা কিছু এলাকায় নিজেদের মতো প্রোগ্রাম করছেন। এতে মানুষের বিজেপির প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে। তার থেকেও বড় কথা যেখানে তাঁরা যাচ্ছেন, সেখানকার মণ্ডল নেতৃত্বকে আগে থেকে কিছু জানানো হচ্ছে না। আমাদের দলের নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। মণ্ডল সভাপতিদের আগাম জানানো হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, বিধায়কদের মর্জিতেই চলছে দল। এটা দলীয় পদের অপমান।
বিজেপির জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক পদাধিকারী বলেন, শিলিগুড়ি পুরসভায় আমাদের দু’জন কাউন্সিলার ছিলেন। তাঁদেরও দল ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছে না। করোনাকালে তাঁদের নিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচি কেন নেওয়া হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। সেখানে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে গৌতম দেব যেভাবে কাজ করছেন, তাতে মানুষের কাছে বার্তা যাচ্ছে শিলিগুড়িতে তৃণমূল ছাড়া আর কোনও দল নেই। উন্নয়নে, মানুষের সঙ্কটে তৃণমূলই ভরসা। বিজেপির নিষ্ক্রিয়তার জন্যই আজ তৃণমূল এই জায়গা করে নিয়েছে। মানুষ ক্রমশ বিজেপির থেকে সরে যাচ্ছে।
নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভ, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিজেপি কেন তৃণমূলের প্রচারের পাল্টা প্রচারে নামতে পারছে না। দলের এক সদস্য বলেন, তৃণমূলের প্রচার মানুষ বিশ্বাস করছে। তাই পাড়ায় সাধারণ মানুষের কাছে শুনতে হচ্ছে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যের মানুষকে বিপদে ফেলার জন্য ভ্যাকসিন দিচ্ছে না। বেসরকারি ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন বিক্রি করে দিচ্ছে। এছাড়া পেট্রল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ তো আছেই। তাই এখন নিজেকে বিজেপি কর্মী পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। এভাবে আর কতদিন নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারব জানি না।
বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রবীণ আগরওয়াল বলেন, ভোটের আগে গোটা দেশ জানত পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। তা না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা সত্যিই হতাশ। এরমধ্যে শিলিগুড়িতে আমি সহ দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা করোনা সংক্রামিত হয়েছিলাম। তাই কোনও কর্মসূচি নিতে পারিনি। আবার আমরা কাজে নেমেছি, সব ঠিক হয়ে যাবে।