রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ছ’গুণ বেশি চাষি উপকৃত
বাংলার ভোট বৈতরণী পার হতে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছিলেন ছোট বড় সব বিজেপি (BJP) নেতাই। কেন্দ্রের কিষান সম্মান নিধি নিয়ে ফলাও করে প্রচার চলে। যদিও বিজেপি নেতাদের কথায় আর কাজে কতটা ফারাক তা এই প্রকল্পের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। নদীয়া জেলায় প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধি প্রকল্পের তুলনায় ছয় গুণ বেশি চাষি রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পে (krishak bandhu scheme) উপকৃত হচ্ছেন। জেলার ১৮টি ব্লকের প্রায় দু’লক্ষ চাষি কেন্দ্রের ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করলেও তা যাচাই করাই হয়নি। শুধুমাত্র পোর্টালেই আবেদনকারীদের নাম রয়ে গিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা। তাঁরা বলেন, কেন্দ্রের কিষান সম্মান নিধির সুবিধা পেতে বহুদিন আগেই আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, কেন্দ্রের তরফে ওই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। তাই প্রকল্পের সুবিধা মিলছে না। যদিও কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।
জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা(অনুসন্ধান) অনিরুদ্ধ দত্ত বলেন, জেলায় ৫৭হাজার চাষি এখনও পর্যন্ত কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়েছেন। এই প্রকল্পে যখন যেমন আবেদন আসছে, আমরা তা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা (COVID19) পরিস্থিতিতেও তিন লক্ষ ৩৪ হাজার ৪১০ জন চাষিকে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন করে অনেকেই আবেদন জমা দিয়েছেন। তাঁরাও যাতে দ্রুত সুবিধা পান, তারজন্য বিভিন্ন ব্লক কৃষিদপ্তরে পুরোদমে কাজ চলছে। জানা গিয়েছে, দুই একরের মতো জমি থাকলে কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে তিনবার দু’হাজার টাকা করে পাবেন আবেদনকারীরা। কিন্তু জেলার অধিকাংশ চাষির ওই পরিমাণ জমি নেই। তাই অনেকেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করতে পারছেন না। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। তবে এই প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রচার হয়নি। তাই প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় বহু চাষি প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।
আইশমালির বাসিন্দা জগদীশ ঘোষ বলেন, রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধার জন্য ন্যূনতম ২০ শতক জমি থাকলেই আবেদন করা যাচ্ছে। তাই সামান্য জমি আছে এমন চাষিরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন। অথচ কিষান সম্মান নিধি কাগজে কলমেই রয়েছে। তার সুবিধা আমরা পাচ্ছি না।
নদীয়া প্রধানত কৃষিপ্রধান জেলা। ধান, পাট, সর্ষে, ভুট্টা, প্রভৃতি চাষের পাশাপাশি জেলার উর্বর মাটিতে কলা, বাদাম, আলু চাষ হয়। এছাড়া জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে উল্লেখযোগ্যভাবে ফুল চাষও হচ্ছে। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে দু’বার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। প্রকল্পের সুবিধা পেতে আগে চাষিদের নিজেদের নামে জমির রেকর্ড বা পরচা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন এই প্রক্রিয়ায় আরও সরলীকরণ করা হয়েছে। যেসব চাষি নিজেদের নামে এখনও জমির রেকর্ড কিংবা মিউটেশন করাতে পারেননি, তাঁরা সাদা কাগজে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। এছাড়া বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো এই প্রকল্পের পাঁচ হাজার টাকার সহায়তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে খুশি জেলার চাষিরা। যদিও কৃষি প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট জেলার চাষিদের একাংশ।