বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

৫০-এ পা ‘লালপাহাড়ির দেশ’ স্মৃতিমেদুর বাংলা সঙ্গীতপ্রেমীরা

July 23, 2021 | 2 min read

‘মেঘমদির মহুয়ার দেশ’ নয়। একটা মহুয়া গাছ। শ্রীরামপুরের রেলস্টেশনে মদিরতার আবেশ নিয়ে আত্মীয়হীন গাছটি কবির বুকে এক দুপুরে রক্তোচ্ছ্বাস এনে দিয়েছিল। কবির মনে হয়েছিল, এর তো লাল পাহাড়ির দেশে থাকার কথা। সালটা ১৯৭১। জন্ম হয়েছিল একটি কবিতার। সুরের ভেলায় দেশকাল ভাসিয়ে, বাংলা গানের একটি মাইলফলক ‘লোকগীতি’ হয়ে সেই কবিতা আজও সুরমূর্চ্ছনা তুলে যাচ্ছে। কালের গতিতে ২০২১ এ অর্ধশতক হয়ে গেল। কিন্তু কী আশ্চর্য! সে যেন হয়ে উঠছে আরও তরুণ। আরও আশ্চর্য এই যে, কবির কল্পনায় দোলা দেওয়া সেই মহুয়া গাছটি আজ আর নেই। কিন্তু অমরত্বের দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ছে সেই মাদকতা, শরীর দুলিয়ে দেওয়া এক বাংলা গান।

হ্যাঁ, কবি অরুণ চক্রবর্তীর (Arun Chakraborty) লেখা ‘ও তুই লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা’ (Lal Paharir Deshe Ja) কবিতা পঞ্চাশ বছরে পা দিল। সঙ্গে সেই কবিতা থেকে তৈরি হওয়া সুরেলা গানটিও। আরও অনেক বিখ্যাত কবির অনেক কবিতা আছে। তাঁদের লেখা গানও আছে। তবে সাধারণের মুখের ভাষা হয়ে, অক্লেশে গুনগুনিয়ে ওঠার নিরিখে ‘লাল পাহাড়ির দেশ’ অবশ্যই স্বতন্ত্রতা দাবি করতে পারে। এক-দু’ বছর নয়, পঞ্চাশ বছর ধরে পাড়ার মাঠে, দেশে-বিদেশে, বাউলের একতারা, বাংলা আধুনিক গানের সরণিতে তার উপস্থিতি ক্রমেই উজ্জ্বলতর হয়েছে। কবি অরুণ চক্রবর্তী সদ্য গিয়েছিলেন পুরুলিয়া। সেইখানে, যেখানে তিনি ওই আত্মীয়বর্জিত একলা গাছটিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সযত্নলালিত একমুখ সাদা দাড়ির ভিড়ে ঠোঁট নড়ে ওঠে। চুঁচুড়ার ফার্মসাইড রোডের বাড়িতে বসে কবি বলে ওঠেন, এখনও ন’টা কবিতা লেখা বাকি আছে। একটি কবির জীবনে ১০টি কালজয়ী কবিতা লেখাই স্বার্থকতা। পাঠকের আর্শীবাদ থাকলে হয়তো লিখেও ফেলব। লাল পাহাড়ির দেশ যেভাবে আজও আমজনতাকে উদ্বেল করছে, তাতে আমি সেই সব মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। কবির ঘনিষ্ঠ চুঁচুড়ার সংস্কৃতিকর্মী তথা তথা ‘হুগলি জেলার গান’ বইয়ের অন্যতম লেখক শ্যামল সিংহ বলেন, ওঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অরণ্য হত্যার শব্দ’-এ
কবিতাটি রাখা হয়েছিল। পরে বাঁকুড়ার সুভাষ চক্রবর্তী তাতে সুর দেন।

হুগলিতেই বড় হয়ে ওঠা। পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু কীভাবে যেন বুকের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল অল্পকথায় বড় বোধ প্রকাশের চেতনা। প্রথমে ফটোগ্রাফিতে সেই অনুভূতি প্রকাশ করতেন। তারপর আসে শব্দের মায়াজাল। একটি ‘মিসফিট’ বা বিচ্ছিন্নতা বোধের কবিতা গান হয়ে বহু ভাষাভাষী মানুষকে একত্রিত করেছে। থামিয়ে রেখেছে ‘কালের চির চঞ্চল গতি’, তাও ৫০ বছর ধরে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Arun Chakraborty, #Lal Paharir Deshe Ja

আরো দেখুন