উচ্চমাধ্যমিকের ফল নিয়ে পুনর্বিবেচনার আশ্বাস সংসদের
কেউ আশানুরূপ নম্বর পাননি। কেউ আবার অকৃতকার্য। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই ইস্যুতে বিক্ষোভ রাজ্যজুড়ে। তার জেরে হস্তক্ষেপ করতে হল নবান্নকে। তারপরেই নম্বর ইস্যুতে কিছুটা নরম হল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। শনিবার নবান্নে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন এবং সংসদ সভাপতি মহুয়া দাসের সঙ্গে ঘণ্টা তিনেক বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। মহুয়াদেবীর কাছে গোটা বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। খানিক অসন্তোষও প্রকাশ করে সংসদকেই এই সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব। এরপরেই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির প্রধানদের উদ্দেশে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন মহুয়া দাস। তাতে বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ বা আবেদন আগামী সাতদিনের মধ্যে সংসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জানানো যাবে। রবিবার বা ছুটি সহ যে কোনও দিন সাক্ষাতের ব্যবস্থা থাকছে। সংসদই সেব্যাপারে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে।
এদিন সকালে কলকাতায় তিলজলার একটি স্কুলে ব্যাপক ভাঙচুর হয়। গার্ডেনরিচের একটি গার্লস স্কুলে ১১৪ জনের মধ্যে ৪৬ জনই অকৃতকার্য হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকরা। অনেকেরই দাবি, সংসদের ফর্মুলায় গলদ থাকায় মাধ্যমিক এবং একাদশে কোনওরকমে পাশ করেও উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করেছে পড়ুয়ারা। এমনকী, সংসদের বিরুদ্ধে ফল নির্ণয়ে ভুল করার অভিযোগও উঠেছে। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কালিন্দীর বাড়ির সামনে জড়ো হয় বেশ কিছু পরীক্ষার্থী। তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। কিছু পড়ুয়া সংসদের সামনেও বিক্ষোভ দেখায়। সংসদ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বহু স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।
হাওড়ায় জগৎবল্লভপুরের হাটালে ৩৬ জন অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন লেখাপড়ায় রীতিমতো ভালো বলে জানান প্রধান শিক্ষক। আমতার একটি স্কুলের অকৃতকার্য ছাত্ররা বাগনান রোড অবরোধ করে। হুগলির চন্দননগরের জ্যোতির মোড়ে জি টি রোড অবরোধ করে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ২৩ জন অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি, জয়নগরেও অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিভিন্ন জায়গায় স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ডায়মন্ডহারবার হাইস্কুলেও দফায় দফায় বিক্ষোভ চলে। উত্তর ২৪ পরগনার আবার শুধু মধ্যমগ্রাম সার্কেলেই ১৪টি স্কুলের প্রায় ৪০০ জন পরীক্ষার্থী এবার উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তার জেরে মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় দীর্ঘক্ষণ যশোর রোড অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভ হয় টিটাগড়েও। খড়্গপুরের ইন্দা, মালঞ্চ ও কৌশল্যায় পথ অবরোধ করে পড়ুয়ারা। ঘাটাল মহকুমার বিদ্যাসাগর হাইস্কুল, দাসপুর-১ ব্লকের নন্দনপুর হাইস্কুলে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখায়। ঝাড়গ্রামের একটি স্কুলও রয়েছে এই তালিকায়। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় রাজ্য সড়ক অবরোধ করে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভ দেখানোর সময়ে আগুনে জখম হয় একজন ছাত্র। দুর্গাপুরে দু’টি স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের অনুত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে। এদিন শিলিগুড়িতে প্রায় তিন ঘণ্টা পানিট্যাঙ্কি রোড অবরোধ করে রাখে রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যাপীঠের ১৪ জন অকৃতকার্য ছাত্রী।
একই দাবিতে রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ ছিল কোচবিহারেও। আশানুরূপ নম্বর না পাওয়ায় স্কুলসংলগ্ন ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক দু’ঘণ্টা আটকে রাখে রাখে ময়নাগুড়ির টেকাটুলি রামকান্ত হাইস্কুলের পড়ুয়ারা। আলিপুরদুয়ারের বক্সা ফিডার রোডে এবং মালদহের বুলবুলচণ্ডীতে মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়কে একই দাবিতে অবরোধ চলে। অবশ্য সংসদের আশ্বাসের পর আশায় বুক বেঁধেছে বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা।