দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে মেগা প্রকল্প
বিশ্ব ব্যাঙ্কের তিন হাজার কোটি টাকায় পাঁচ জেলায় সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া ও বাঁকুড়া জেলায় এই কাজ হবে। প্রথম দফার কাজে ডিভিসির বিভিন্ন সেচ ক্যানেলগুলির সংস্কার, আধুনিকীকরণ ও স্লুইস গেটে উন্নত প্রযুক্তি গড়ে তোলার জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মোট এক হাজার কিলোমিটার ক্যানেল সংষ্কার হবে। একইসঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচ জেলায় আরও এক হাজার কিলোমিটার ক্যানেল সংষ্কার হবে। সেচখাল সংস্কার ও পার্শ্ববর্তী উন্নয়নের কাজে খরচ হবে ১৪০০ কোটি টাকা। ১৬০০ কোটি টাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগানো হবে। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের দপ্তরে একটি বৈঠকে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে জেলাশাসক ছাড়াও জেলা পরিষদের সভাধিপতি, কৃষি ও সেচদপ্তরের আধিকারিক এবং কর্মাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, বর্ষার মরশুম শেষ হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকেই কাজ শুরু করা হবে। সেচ ক্যানেলগুলির আধুনিকীকরণের কাজ হবে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই প্রজেক্টের কাজ হবে।
জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে মোট ৩ হাজার কোটি টাকায় পাঁচ জেলার উপর দিয়ে যাওয়া ডিভিসি ক্যানেলের কাজ করা হবে। প্রায় সাত দশকের পুরনো এই ক্যানেলগুলির পরিকাঠামো পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণের কাজ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে দুই দফায় এই কাজ হবে। প্রথম দফার জন্য ইতিমধ্যেই ৬২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হবে। ২০২২ সালে বর্ষার আগেই এই কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে তা ওই বছরের শেষ পর্যন্ত কাজ চলতে পারে। দ্বিতীয় দফার কাজের জন্য ৭৫৫ কোটি টাকার বরাদ্দ মিলেছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে কাজের জন্য আরও ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। তার মধ্যে কৃষি, ফিশারি সহ আরও কয়েকটি দপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজ এই প্রকল্পের আওতায় হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম দফায় কাজ শুরুর জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা পরিদর্শন শুরু করেছেন।
মূলত, ডিভিসির পুরনো ক্যানেলগুলি মজবুত, লকগেটের সংস্কার ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি সম্পূর্ণ আধুনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ইলেক্ট্রোমেকানিজম পদ্ধতিতে জল ছাড়ার বিষয়ে ‘রিয়েল টাইম’ তথ্য দেওয়ার পরিষেবা চালু করা হবে বলেও জানা গিয়েছে। জল ছাড়ার তথ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সর্বসাধারণের জন্যও প্রকাশ করা হবে। এর ফলে কৃষি, সেচ, বন্যার সতর্কতা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। এই প্রকল্পের অ্যাডিশনাল প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ১৯৬৪ সালের ডিভিসি ক্যানেল সিস্টেম চালুর পর এই প্রথম এত বড় কোনও সংস্কার ও পুনর্নবীকরণ হচ্ছে। প্রথম দফায় সেচ পরিকাঠামোর কাজ, দ্বিতীয় দফায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও তার পরবর্তীতে কৃষি, মৎস্য ও এগ্রি মার্কেটিং সহ একাধিক দপ্তর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করবে। সেই কাজের জন্য ৬৬ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা এই প্রকল্প থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে।