অধ্যাপকের পদাবনতি মামলায় হাইকোর্টে ধাক্কা খেল বিশ্বভারতী
পদার্থবিদ্যার বিভাগীয় প্রধানের পদাবনতি বিতর্কে ধাক্কা খেল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ৩০ নভেম্বর বা আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কোনওরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত চালানো যাবে। কিন্তু, আদালতের অনুমতি না নিয়ে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
গত বছরের ৬ জানুয়ারি মানস মাইতিকে পদার্থবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছিল। তিন বছর বা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সময়কালের জন্য। এই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তাঁকে জানান, কর্মসমিতির সুপারিশ মতো তাঁর জায়গায় তারাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়োগ করা হল। মানসবাবু সেই মতো নয়া বিভাগীয় প্রধানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। মানসবাবুর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের তদন্ত শুরু করার পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিসও জারি হয়, চার্জশিটও দেওয়া হয়। কিন্তু, এই তদন্ত চলাকালীন ১৩ জুন বিশ্বভারতী এক প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে। সেখানে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, কর্তব্যে ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালনে তিনি অবহেলা করেছেন। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সেই কারণেই তাঁর পদাবনতি ঘটানো হয়েছে।
এই পদক্ষেপ তিনি চ্যালেঞ্জ করলে শুনানিতে বিশ্বভারতীয় দাবি করে, আইন মেনেই তাঁর পদাবনতি ঘটানো হয়েছে। আদালতে যান মানসবাবু। বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেছেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত চলাকালীন নিয়োগকর্তার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ইঙ্গিত দেওয়া আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে প্রেস রিলিজে তাঁর পদাবনতির কারণ বলেই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পদাবনতি ঘটানোর সময় তা বলা হয়নি। এও বলে দেওয়া হয়েছে, অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। যা সর্বাংশে সত্য নয়। কারণ, তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। মামলাকারী অভিযোগের জবাব তথা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে।
বিশ্বভারতী (Visva-Bharati) যে দু’টি বিধি ওই অধ্যাপকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চাইছে, তা কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়ে এই হাইকোর্টেই দুই বিচারপতির বেঞ্চে বিচার চলছে। এমতাবস্থায় এই বিধির প্রয়োগ নিয়ে মামলাকারীর তরফে প্রশ্ন তোলা হলে আদালত বিশ্বভারতীকে চার সপ্তাহের মধ্যে যাবতীয় বক্তব্য পেশ করতে বলেছে। মামলাকারী তার জবাব দিলে ২০ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি বিভাগের সব অধ্যাপককে উপাচার্যের অফিসে ৬ ঘন্টা আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। আটকে থাকা অধ্যাপকদের উদ্ধার করতে মানসবাবু সহ অন্তত ১০ জন অধ্যাপক সেখানে যান। সেই ১০ জনকেই কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হয়েছিল। ঘটনার পরেরদিন, ২৭ ফেব্রুয়ারিই মানসবাবুর পদাবনতি হয়।