নেট মাধ্যমে ক্ষোভপ্রকাশ কর্মীদের, রেগে অগ্নিশর্মা বিজেপি নেতৃত্ব
যাবতীয় ক্ষোভ-অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ বারবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন? এই ইস্যুতে দলের বঙ্গ নেতাদের উপর চরম ক্ষুব্ধ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশের মত, এর ফলে নষ্ট হচ্ছে দলেরই ভাবমূর্তি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কি কর্মীরা সেভাবে কাছে পাচ্ছেন না? আপাতত দলের বঙ্গ নেতৃত্বের কাছে এই প্রশ্নেরই উত্তর চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় পার্টি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ মনে করছে, সমস্যার উদ্ভব হলেও যত দ্রুত তার সুরাহা করা প্রয়োজন। অনেক সময়ই বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেডে তা হচ্ছে না। বহু ক্ষেত্রেই সরাসরি শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছনোও যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে নেতা-কর্মীদের একটি অংশের ক্ষোভ উগরে দেওয়ার মঞ্চ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। যার ফলে অনেক সময়ই নেটিজেনদের কাছে তো বটেই, সার্বিকভাবেই হাসির খোরাকে পরিণত হচ্ছে পার্টি।
বিজেপির আসানসোলের সাংসদ সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট করেছেন। যাকে কেন্দ্র করে জল্পনা এবং বিতর্ক দুটোই চরম আকার নিয়েছে। তবে একা আসানসোলের দলীয় সাংসদই নন। এর আগে বঙ্গ বিজেপির আর এক সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ফেসবুক লাইভ করে সরাসরি তোপ দেগেছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর একের পর এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে ‘কেডিএসএ’কে (কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন) তীব্র আক্রমণ করেছিলেন দলের আরেক নেতা তথাগত রায়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নিচুতলার অনেক দলীয় নেতা-কর্মীও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রের খবর, অসন্তুষ্ট নেতাদের বোঝানোর কাজও শুরু করতে চাইছে কেন্দ্রীয় পার্টি। বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেছেন, ‘দলের প্রবীণ নেতারা গোটা বিষয়টি দেখছেন। তাঁরা বোঝাবেনও।’ সূত্রের খবর, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পার্টির বক্তব্য, বারবার দিল্লির নেতাদেরই হস্তক্ষেপ করতে হবে কেন? যদি কোনও নেতা বা কর্মীর মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়, তাহলে তাঁরা কি সরাসরি রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে পৌঁছতে পারেন না? প্রশ্ন করছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গ বিজেপির এক সাংসদ বলেছেন, ‘অনেক সময়ই সরাসরি নেতাদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না, এটা সত্যি। যা সমস্যা বৃদ্ধি করছে। কারণ কথা বলা সম্ভব হলে যেকোনও সমস্যারই দ্রুত সমাধান সম্ভব হয়।’ এর আগে দিল্লিতে এসে ‘বেসুরো’দের নিয়ে খোদ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছেই নালিশ জানিয়ে গিয়েছেন দিলীপবাবু। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও চাইছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হওয়ার পরিবর্তে আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গেই কথা বলুন অসন্তুষ্টরা। এ ব্যাপারে বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় মুখপাত্র তথা দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিজেপি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে চলে। এই দলে প্রত্যেকেরই মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। তবে কে কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। কিন্তু দল চায়, যেকোনও ইস্যুতেই যেন আগে সরাসরি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন নেতা, কর্মীরা।’