বিজেমূল তত্ত্ব ভুল, পার্টির ক্লাসে শেখাবে সিপিএম
বিজেপি-তৃণমূল এক নয়। বিজেমূল স্লোগান ভুল। পার্টির কমরেডদের এই পাঠই দিতে চলেছে সিপিএম (CPM)। প্রমোদ দাশগুপ্তর জন্মদিন উপলক্ষে পাঠচক্রের আয়োজন করেছে আলিমুদ্দিন। দলের ক্লাসের জন্য বিভিন্ন জেলায় পাঠানো নোট নিয়ে উঠেছে বিবিধ প্রশ্ন। ওই নোটে বিজেপি ও তৃণমূল এক নয় বলেও দু’দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, দলের লাইন ঠিক কী হবে তা কি এখনও ঠিক করে উঠে পারলেন না সিপিএম নেতারা?
বাম ভোট তৃণমূলে গিয়েছে বলে রাজ্য কমিটির বৈঠকে মেনে নিয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র (Surjya Kanta Mishra)। স্বীকার করেছিলেন,’বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলকেই উপযুক্ত ভেবেছেন মানুষ।’ দিন কয়েক আগে দলের কর্মীদের সঙ্গে ফেসবুক-আলোচনায় সূর্যকান্ত বলেছিলেন,’বিজেমূল স্লোগানের ব্যবহার ভুল হয়েছিল।’ প্রমোদ দাশগুপ্তর জন্মদিন উপলক্ষে দলের ক্লাসে কর্মীদের তাই শেখানো হবে। নোটে ‘বিজেমূল’ প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে,’বিজেপি ও অন্য কোনও রাজনৈতিক দল এক নয়। বিজেপিকে পরিচালনা করে ফ্যাসিবাদী আরএসএস। কিন্তু নির্বাচনের সময় কোথাও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল সমান। বিজেমূল জাতীয় স্লোগানের ব্যবহার করা, বিজেপি-তৃণমূল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’র মতো কথা কিছু বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।’ ভোটের আগে সিপিআইএমএল (লিবারেশেন)-র সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছিলেন,’বিজেপিই পয়লা শত্রু। তৃণমূল ও বিজেপি এক নয়।’ ভোটের পর তা মেনে নিয়েছেন সিপিএম নেতারা। তাই বোধহয় জাতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় আপত্তি নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে সূর্য-বিমান।
এ পর্যন্ত পড়ে বোঝা গেল, বিজেপি-তৃণমূল এক নয়। পরক্ষণেই তৃণমূলের নেপথ্যে আরএসএস রয়েছে দাবি করা হয়েছে ওই নোটে। লেখা হয়েছে,’একথা মাথায় রাখতে হবে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে, দলের রেজিস্ট্রেশন থেকে প্রতীক সবই হয়েছে আরএসএস-র নির্দেশে।’ তাহলে এখন কেন তৃণমূল-বিজেপি এক নয়? সিপিএমের যুক্তি, ‘বিজেপির চরিত্রই হল যে দলের সাহায্য নেয় তাকে গিলে ফেলতে চায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে দুই দলের মধ্যে লড়াই নিছক গড়াপেটা নয়। আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনে বলেছি আক্রমণ করেছি। তাতে লাভবান হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু বিজেপি সরকারে না এলেও মনে রাখতে হবে রাজ্যে তারা একমাত্র বিরোধী দল। নির্বাচনে পরাজিত হলেও বিজেপির বিপদ ছোট করে দেখা যায় না। তৃণমূল কংগ্রেসের স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হলে বিজেপি লাভবান হবে।’
সিপিএমের নোট অনুযায়ী, বিজেপিকে নিশানা করলে লাভ হচ্ছে তৃণমূলের। আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হলে লাভবান হবে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, তাহলে কীভাবে সিপিএম লাভবান হবে? পার্টির কমরেডরা করবেনটা কী? সেই দিশাই তো নেই। কলকাতা জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন,’পাঠচক্রে যাব না। আগে সিলেবাস ঠিক করুন। এ তো দেখি স্ববিরোধিতায় ভরা।’