কংগ্রেসের বদলে মোদীর নিশানায় তৃণমূল, জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী মুখ মমতাই?
জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া। উত্তাল সংসদের বাদল অধিবেশন এবং তার মাঝেই তৃণমূল নেত্রীর দিল্লি সফর—এই দুইয়ের জাঁতাকলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। আর তাই অন্য কোনও দল নয়। বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে তাঁর নিশানায় থাকল একটিই মাত্র দল—তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)।
মোদী বিরোধী মহাজোট। বাংলার নির্বাচনের সময় থেকে এটাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্লোগান। এটাই লক্ষ্য। বিপুল জনাদেশ নিয়ে হ্যাটট্রিকের পরও তিনি যে এতটুকু লক্ষ্যচ্যুত হননি, তার প্রমাণ দিল্লি এসেই রেখেছেন নেত্রী। এখন থেকেই প্রত্যেক বিরোধী একজোট না হলে আখেরে যে ফল মিলবে না, এই সারসত্যটা কংগ্রেসকেও বুঝতে বাধ্য করেছেন। তাই তাঁর অভ্যর্থনায় সোনিয়া গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছেন রাহুল। অখিলেশ যাদব বা তেজস্বী, মোদি বিরোধী প্রতিটি শক্তিকে এক ছাতার নীচে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা। এটাই শঙ্কিত করেছে মোদীকে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে ছিল তারই প্রতিফলন। প্রধানমন্ত্রী দু’টি ইস্যু নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রথম ইস্যু, রাজ্যসভায় সম্প্রতি তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের হাত থেকে পেগাসাস সংক্রান্ত সরকারি বিবৃতির কাগজ কেড়ে ছিঁড়ে দেওয়া। সরকার পক্ষের অভিযোগ ছিল, তৃণমূল এমপি শান্তনু সেন এই কাজ করেছেন। মোদী মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন এবং তৃণমূলের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেন। বলেন, ‘এটা সংসদীয় ব্যবস্থার অপমান।’ দ্বিতীয় ইস্যু, তৃণমূল এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েনের ‘পাপড়ি চাট’ মন্তব্য। প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিল পাশের প্রক্রিয়াকে যে ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে, তা নিন্দনীয়।’ অর্থাৎ দু’টি ইস্যুর লক্ষ্যই তৃণমূল।
গত ১৯ জুলাই শুরু হয়েছে সংসদের অধিবেশন। আর সেদিন থেকেই বিরোধীরা নেমেছে সরকারের বিরুদ্ধে। লাগাতার দাবি উঠেছে, পেগাসাস কাণ্ডের তদন্ত চাই। এই হট্টগোলের মধ্যেও অবশ্য সরকার পক্ষ পাশ করিয়ে চলেছে একের এক পর বিল। এর প্রতিবাদে ডেরেক বলেন, ‘এটা কি বিল পাশ হচ্ছে? নাকি পাপড়ি চাট তৈরি হচ্ছে?’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকের এহেন মন্তব্যে যে প্রধানমন্ত্রী তীব্র আঘাত পেয়েছেন, মঙ্গলবার তাঁর মন্তব্যেই পরিষ্কার। ডেরেক এদিনও বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদী যে তৃণমূলকে ভয় পেয়েছেন, সেটা স্পষ্ট। তাই দলের এমপিদের বৈঠকে তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূল।’
মমতার দিল্লি সফরের পর উত্তপ্ত হয়েছে ত্রিপুরা। কারণ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর। মমতা দিল্লিতে জানিয়ে গিয়েছেন, দু’মাস অন্তর দিল্লি আসব। অর্থাৎ, মোদী বিরোধী জোটের ভরকেন্দ্র যে মমতাই, সেটা এখন প্রতিষ্ঠিত। তাই কি এবার জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় মমতাকেই প্রধান টার্গেট করছেন মোদী?