উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

শ্রম দপ্তরের উদ্যোগে ৩৩টি চা বাগানে জলপ্রকল্প

August 4, 2021 | 2 min read

উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের ঘরে ঘরে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জলপ্রকল্পের কাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই খবরে উচ্ছ্বসিত চা বাগান এলাকার কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের জন্য আগেই ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গত সোমবার থেকে শুরু হয় বাগানে বাগানে শিবির করে চা শ্রমিকদের পিএফ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধারকার্ডের লিঙ্কের কাজ। রাজ্য সরকার পিএফের সঙ্গে আধার লিঙ্কের শিবির শুরু করায় ডুয়ার্স সহ উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিক মহল্লায় উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে। এবার পরিস্রুত পানীয় জল। রাজ্যের শ্রমদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর যৌথভাবে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে। ধাপে ধাপে সব চা বাগানেই তা করা হবে। আর এটা হলে উপকৃত হবেন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে অসম-বাংলা সীমানায় কুমারগ্রামের সঙ্কোশ নদী পর্যন্ত ৩১৬টি বাগানের সাড়ে চার লক্ষ শ্রমিক রয়েছেন। পানীয় জলপ্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পিএইচই’র ইঞ্জিনিয়াররা বাগানে সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

ডুয়ার্সের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে শ্রমিকদের কাছে টানতেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের এই নয়া উদ্যোগ। শ্রমদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না মঙ্গলবার টেলিফোনে বলেন, সম্প্রতি শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিক সংগঠনগুলির বৈঠকে চা বাগানগুলিতে এই পানীয় জল প্রকল্প তৈরির বিষয়টি ওঠে। বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোন কোন বাগানে প্রথমে এই জল প্রকল্পের কাজ করা যায়। তাতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলি বেশকিছু বাগানের নাম দেয়। এই জল প্রকল্পের জন্য আপাতত ৩৩টি বাগানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের মন্ত্রীর সঙ্গেও এই জল প্রকল্প তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চা বাগানগুলিতে জলপ্রকল্প তৈরির বিষয়টিতে সম্মতি দিয়েছেন। পিএইচই’র সমীক্ষা রিপোর্ট হাতে এলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

পিএইচই’র আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত ধর এদিন বলেন, ৩৩টি বাগানে তিন ধাপে এই কাজ শুরু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাগানে পানীয় জল পৌঁছলে স্থানীয়রা খুবই উপকৃত হবেন। এখন কয়েকটি বাগানে জলের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সবক’টি বাগানেই পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ ধাপে ধাপে নেওয়া হবে।

ভারতীয় মূলনিবাসী আদিবাসী বিকাশ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূলের রাজ্য এসটি সেলের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ লাকড়া বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। বাম আমলে যা ভাবা যেত না, এই সরকার তা করে দেখাচ্ছে। আমরা এই জল প্রকল্পকে স্বাগত জানাচ্ছি। চা বাগানের অনেকেই খালবিল, ঝোরা কিংবা নদীর জল পান করেন। এতে তাঁদের সারা বছরই পেটের রোগ লেগে থাকে। পরিস্রুত পানীয় জল চা মহল্লায় এলে এসব রোগভোগ থেকে বাসিন্দারা মুক্তি পাবেন।

শিলিগুড়ির অতিরিক্ত শ্রম কমিশনারের অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত বাগানে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট রয়েছে, প্রথম দফায় এরকম ৩৩টি বাগানকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। তারমধ্যে কালচিনির দলসিংপাড়া, তোর্সা, মাদারিহাটের লঙ্কাপাড়া, বীরপাড়া, বান্দাপানি, কুমারগ্রামের তুরতুরিখণ্ড, ফাঁসখাওগা, শ্রীনাথপুরের মতো চা বাগান আছে। এসব বাগানে পানীয় জলের সঙ্কট দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

শ্রমদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পিএইচই’র ওই পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা রিপোর্ট হাতে আসার পর অর্থ বরাদ্দের জন্য তা অর্থদপ্তরে পাঠানো হবে। অর্থদপ্তর অর্থ বরাদ্দ করার পর শ্রমদপ্তরের তত্ত্বাবধানে চা বাগানগুলিতে এই জল প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু করে দেবে পিএইচই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #water project, #Tea Gardens

আরো দেখুন