লাভজনক ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ কেন? মোদী সরকারকে তোপ বিরোধীদের
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তালিকা তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছে। বিক্রির জন্য। ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক এবং ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি লাগাতার লাভ করে চলেছে। এমনকী, হাঁড়িকাঠে যে দু’টি ব্যাঙ্ককে তোলা হয়েছে, সেই দু’টিও কিন্তু অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে মুনাফার মুখ দেখেছে। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (Central Bank) লাভ করেছে ২০৬ কোটি টাকা এবং আইওবির মুনাফা ৩২৭ কোটি। শুধু তাই নয়, বুধবার জানা যাচ্ছে, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ৫৫ শতাংশ মুনাফা বাড়িয়ে রেকর্ড সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া লাভ করেছে ৭২০ কোটি টাকা। এর আগের খবর, পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্কও মুনাফা করেছে প্রথম ত্রৈমাসিকে। অথচ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিই বেসরকারিকরণের টার্গেট? এই ছক থেকে কেন সরকার সরছে না? এই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারকে সরাসরি চেপে ধরেছে বিরোধীরা।
এমনিতেই চলতি বাদল অধিবেশনে পেগাসাস কাণ্ড নিয়ে জেরবার কেন্দ্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফর এবং জোট বাঁধতে থাকা মহাজোটের জন্যও চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে বিজেপির। এই গোদের মাঝে বিষফোঁড়া হল মঙ্গলবার সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সংসদে পেশ করা রিপোর্ট। কমিটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আর্থিক সমস্যা, রুগ্নদশা বা অনুৎপাদী সম্পদের চাপ অজুহাত দেখিয়ে সরকারি ব্যাঙ্ক বিক্রি মেনে নেওয়া যায় না। যেভাবেই হোক এই প্রবণতা সরকারকে ত্যাগ করতে হবে।
অর্থনীতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কের আর্থিক চাপ আছে। সেটা সর্বজনবিদিত। কিন্তু সরকারের উচিত সবদিক বিবেচনা করে এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য ব্যাঙ্ককে সাহায্য করা। সেটা না করে সরকার নানা অজুহাত দিচ্ছে। মুনাফা কমে যাওয়া, লোকসান, লাগাতার ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় অনুৎপাদী সম্পদের পাহাড়ে বসে থাকার কারণ দেখিয়ে ব্যাঙ্ক বিক্রিকেই একমাত্র পন্থা হিসেবে দেখাটা ঠিক নয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির বক্তব্য, অজুহাত দেখানো চলবে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সরকার এবং শেয়ার হোল্ডার—সকলে মিলেই উচিত একটা কোনও মধ্যপন্থা বের করা। দেখতে হবে যাতে এই চাপগুলো কমিয়ে ব্যাঙ্ককে স্থিতিশীল করা যায়। স্ট্যান্ডিং কমিটির এই মতামত ও রিপোর্ট বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, অর্থনীতি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি এমপি জয়ন্ত সিনহা। যিনি নিজেই প্রথম মোদি সরকারের আমলে ছিলেন অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী। সুতরাং তাঁর নেতৃত্বাধীন স্ট্যান্ডিং কমিটিকে বিরোধীদের সুরে পক্ষপাতযুক্ত বলতে পারবে না সরকার পক্ষ।
সংসদের বাদল অধিবেশনে বিমা বিল পাশ হয়ে গিয়েছে, ব্যাঙ্কিং বিল আসছে। এরই মধ্যে সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ নিয়ে আরও সক্রিয় হতে অর্থমন্ত্রককে বলেছে নীতি আয়োগ। অর্থমন্ত্রককে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণের স্টেটাস সর্বদাই যেন আপডেট করা হয়। নীতি আয়োগ স্থির করেছে, আপাতত যে সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ করার কথা, সেই প্রক্রিয়া আগে শেষ হোক। অথবা প্রক্রিয়াটি অন্তত চূড়ান্ত রূপ নিক। তার আগে আর কোনও সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ ঝাঁপানো হবে না। কাজেই আগামী আট মাস নীতি আয়োগ দেখতে চায়, সত্যিই কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে মোদি সরকারের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া।