বিভাজনের তাসে চূর্ণ কাশ্মীর, ৩৭০ ধারা বিলোপেও ফেরেনি শান্তি
বৃহস্পতিবার সাতসকালে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির একটি মন্তব্য, ‘শোক’। জম্মু ও কাশ্মীরের (Kashmir) বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনে এই শব্দটিই বুঝিয়ে দিচ্ছে উপত্যকাবাসীর মনোভাব। শুধু মেহবুবা নন, মোদী সরকারের গালভরা প্রতিশ্রুতি নিয়ে একরাশ প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনেও। তার প্রতিফলন ধরা পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জান পাল্লা নামে এক কাশ্মীরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শান্তি এবং বিকাশ এক সুখী দম্পতি। তারা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারে না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, দু’জনকেই কাশ্মীর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।’
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরপরই সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে মোদী সরকার। দিনটা ছিল ৫ আগস্ট। বিভাজনের তাস খেলে পূর্বতন রাজ্য ভেঙে গড়া হয় জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামের দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সেদিন বড় মুখ করে নতুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এই সিদ্ধান্তে উপত্যকায় জঙ্গি কার্যকলাপ কমবে। উন্নয়নে ভরে যাবে গোটা এলাকা।’ কিন্তু, কোথায় উন্নয়ন! দু’বছর পর কাশ্মীরের মানুষ দেখতে পাচ্ছে, জঙ্গি কার্যকলাপ তো কমেইনি। বরং পুলওয়ামা-অবন্তীপোরা-ত্রাল থেকে শ্রীনগরে নজর সরিয়ে এনেছে জয়েশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী। নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি গলে ড্রোন হামলা হয়েছে জম্মু বিমানবন্দরের মধ্যে থাকা বায়ুসেনার ঘাঁটিতে। স্থানীয় জঙ্গি নিয়োগও থেমে নেই। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ২০২০ সালে জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে ১৬৩ জন। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ৬৩ জন সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে ভিড়েছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত উপত্যকায় ৮০ জঙ্গিকে খতম করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের অধিকাংশই লস্কর-ই-তোইবা এবং জয়েশ-ই-মহম্মদের সদস্য। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ১৫৭। ২০২০ সালে ২২১ জন।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের গৃহবন্দি করা হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি ছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁদের মুক্তি দেবে প্রশাসন। হবে নির্বাচনও। তারপর দু’বছর কেটে গেলেও ভোট নিয়ে সেভাবে উচ্চবাচ্য করছে না কেন্দ্র। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও শুরু করা যায়নি। পুরনো মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি তৈরি করেছে গুপকর জোট (পিএজিডি)। জোটের মুখপাত্র প্রবীণ সিপিএম নেতা এম ওয়াই তারিগামি বলেন, ‘সাফল্য নিয়ে লম্বা লম্বা দাবি করা হচ্ছে। বাস্তব হল, ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে পরিস্থিতি দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। এখন সংসদে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী বলছেন, স্থিতাবস্থা ফিরলে উপযুক্ত সময়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে!’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের বাকস্বাধীনতা খর্ব করা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার পরে দু’টি লকডাউন দেখেছে দেশ। ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা লকডাউনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছি।’