করোনার ধাক্কায় শিল্পীদের মাথায় হাত, শান্তিপুরের তাঁতকে বাঁচাতে দিল্লিতে সরব মহুয়া
নোটবন্দি, জিএসটির পর লকডাউন। পরপর ধাক্কায় ধুঁকছে বাংলার তাঁতশিল্প। বাধ্য হয়ে পেশাবদল করছেন তাঁতশিল্পীরা। শনিবার ৭অগাস্ট ছিল আন্তর্জাতিক হ্যান্ডলুম দিবস। ওইদিনও নদীয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীদের মুখে আক্ষেপের সুর শোনা গেল। তাঁতশিল্প বাঁচাতে দিল্লিতে পোস্টার হাতে বার্তা দিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) । তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, হ্যান্ডলুম পরুন, হ্যান্ডলুম শিল্প বাঁচান। তিনি নিজেও ওইদিন শান্তিপুরের হ্যান্ডলুম শাড়ি পরে পোস্টার হাতে ছবি পোস্ট করেছেন।
সাংসদের ওই পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল হতে শুরু করেছে। তাতে কেউ মন্তব্য করেছেন, হ্যান্ডলুম দিবসে শান্তিপুরের হস্তচালিত তাঁতশিল্পকে সম্মান জানানোর জন্য সাংসদকে ধন্যবাদ। কেউ আবার লিখেছেন, আজ জাতীয় হস্তচালিত তাঁতশিল্প দিবস। কিন্তু শান্তিপুরের সেই তাঁতশিল্পের আজ রুগ্ন দশা, শিল্পীদের অবস্থা করুণ। ঐতিহ্যবাহী শান্তিপুরে কমবেশি প্রায় সকলেই তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেই শিল্পে এখন মন্দা দেখা দিয়েছে। সুতোর দাম বাড়লেও, বাড়েনি মজুরি ও শাড়ির দাম। ফলে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না শিল্পীরা। সরকারের কাছে আবেদন, অনুগ্রহ করে তাঁত শিল্পের রুগ্ন অবস্থার দিকে নজর দিন, তাঁতিদের বাঁচান। অনেকেই বলেন, বাংলার হ্যান্ডলুম রক্ষা করতে সাংসদের বার্তাকে সাধুবাদ জানাই।
হস্তচালিত তাঁতশিল্পের সঙ্গে বছর দুয়েক আগেও শান্তিপুর পুরসভা ও গ্রামীণ এলাকার প্রায় ৬০হাজার তাঁতশিল্পী যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই এই শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ওপার বাংলা থেকে বহু মানুষ এদেশে চলে আসেন। তারপর পুরনো পেশা আগলে ধরে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। নোটবন্দিতে ধাক্কা খেয়েছিল তাঁতশিল্প। তার উপর আচমকা জিএসটি লাগু করেছিল কেন্দ্র। করোনার জেরে লকডাউনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে এই শিল্পে। শান্তিপুরের শ্যামবাজার এলাকার বাসিন্দা তাঁতশিল্পী অমিত ঘোষ বলেন, নতুন করে এই পেশায় কেউ আসছেন না। অনেকেই আবার পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজের জন্য ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। হস্তচালিত তাঁতে সাধারণত একটি কাপড় বুনতে মোটামুটি দু’দিন সময় লাগে। কিন্তু আমরা যে পারিশ্রমিক পাই তাতে কোনওভাবেই সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে পেটের তাগিদে তাঁতশিল্পীরা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফুলিয়া কাঁঠালতলার বাসিন্দা তপন কাটারি বলেন, ১২ বছর বয়স থেকে তাঁতের কাজ শুরু করেছিলাম। এমন দুর্দিন আগে কখনও আসেনি। তাঁত বুনে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ১০০দিনের কাজে যুক্ত হয়েছি।
জানা গিয়েছে, রানাঘাট-১ ব্লকের আইসতলা, কলাইঘাটায় হাতে বোনা গামছা, লুঙ্গির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া শান্তিপুর ফুলিয়ার তাঁত কাপড় বিখ্যাত। বর্তমানে যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে হ্যান্ডলুম। শিল্পীদের অনেকেই বলেন, লকডাউনের কারণে গ্রাম বাংলার হাট-বাজার দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। নতুন করে বাজারের কাপড়ের চাহিদা নেই। যে কারণে উৎপাদন কমেছে। তাই অনেক শিল্পী কর্মহীন হয়েছেন। তবুও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মন্দা কেটে যাবে। সচল হবে হস্তচালিত তাঁত। আবারও শোনা যাবে মাকুর শব্দ। সেই আশাতেই দিন গুনছি।