কর্মীদের বেতন কাটা রবীন্দ্র ভাবনার পরিপন্থী, আদালতের মন্তব্যে অস্বস্তিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ
দানের নামে কোনও কর্মীর অনুমোদন ছাড়া তাঁর বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়া যায় না। দান হবে স্বেচছায়, তাতে জোর চলে না। অথচ, বিশ্বভারতী (Visva Bharati) বিশ্ববিদ্যালয় উমপুনে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করতে অধ্যাপকদের এক দিনের বেতন কেটে নিয়েছিল, তাঁদের একাংশের মত ছাড়াই। তার জেরে হওয়া মামলায় বিশ্বভারতীর এমন পদক্ষেপ সম্পর্কে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেছেন, এমন জবরদস্তি রাবীন্দ্রিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী।
গত বছরের ২৪ মে বিশ্বভারতীর এক নোটিসে বলা হয়, মে মাসের বেতন থেকে সব স্থায়ী কর্মীর একদিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে ২০ মে হওয়া উমপুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে। কিন্তু সেখানকার অধ্যাপকরা এই পদক্ষেপ চ্যালেঞ্জ করে আদালতকে জানান, কর্মীদের অনুমতি ছাড়া কর্তৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ করতে পারে না। তাই সেই টাকা ফেরত দেওয়া হোক। বিশ্বভারতী দাবি করে, উপাচার্যের এমন পদক্ষেপে যদি কারও আপত্তি থাকে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতিতে চ্যালেঞ্জ করা যায়। তা না করে বিষয়টিকে আদালতে টেনে আনা হয়েছে। এদিকে, এই মামলা সূত্রে দেখা যায়, গত বছরের ২৮ মার্চ করোনা আক্রান্তদের সাহায্যার্থে বিশ্বভারতী একদিনের বেতন দান করার যে আবেদন করেছিল, সেইমতো সকলেই স্বেচ্ছায় তা মেনে নিয়েছিলেন।
কিন্তু, উমপুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নোটিসের বয়ান সম্পর্কে মামলাকারীদের সংগঠন আপত্তি তোলে। তা সংশোধনের আর্জি পেশ হলেও সাড়া মেলেনি। বিশ্বভারতীর নোটিসে বলা ছিল, আশা করা হচ্ছে কর্মীরা একদিনের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। আদালত বলেছে, এটা কখনও বাধ্যতামূলক হতে পারে না। তাই দুর্গতকে সাহায্য করার মহান উদ্দেশ্য এখানে কলঙ্কিত হয়েছে। কিন্তু, নোটিস অনুযায়ী বেতন কাটা হয়েছে। তা এতদিনে ত্রাণ তহবিলে সম্ভবত জমাও হয়েছে। তাই কেটে নেওয়া অর্থ ফেরত দিতে বলা হল না। কিন্তু, বিশ্বভারতীকে মনে রাখতে হবে, এমন কাজে দাতার মানসিক সদিচ্ছার প্রতি ভরসা রাখতে হবে।