দুর্গাপুরের বাজার মাতাচ্ছে ‘এসি’ রাখী
রাখী হল ভাতৃত্ববোধ, মনের বন্ধনের উৎসব। রাখী মানে সুখের অনুভূতি। এবার অবশ্য রাখী দেবে হিমশীতল অনুভূতিও। রাখীতে থাকা বিশেষ বোতাম টিপলেই ঠান্ডা হয়ে যাবে হাত। দুর্গাপুরের বাজার মাতাচ্ছে এমনই ‘এসি’ রাখী (AC Rakhi)। খুদে ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রের ছবি তুলে ধরা হয়েছে রাখীতে। লিটিল কৃষ্ণা, ছোটা ভীম থেকে স্পাইডারম্যান, ডোরেমন সবই রয়েছে। ভ্যাপসা গরমে ক্ষণিকের শীতল অনুভূতি দেওয়া এই অভিনব রাখী দেদার বিকচ্ছে দুর্গাপুরে। বিক্রেতাদের দাবি, করোনা মহামারী গতবছর থেকে রাখীর বাজারের জৌলুস কেড়ে নিয়েছে। করোনা বিধিনিষেধের জালে উৎসবের আমেজ অনেকটাই ফিকে হয়েছিল। এবার রাখীর বাজার চাঙ্গা করতেই অভিনব এসি রাখী বাজারে আনা হয়েছে। এই নতুন ধরনের রাখীর ভালো চাহিদা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভাই দাদাদের মঙ্গল কামনায় শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হাতে পবিত্র সুতো বেঁধে দেয় বোনেরা। পাশাপাশি দিদি-বোনকে চিরজীবন রক্ষার্থে ভাই-দাদার শপথের প্রতীক হয় রাখিবন্ধন। সব ধর্মের মানুষের বন্ধনের উৎসব রাখী। যদিও ঐতিহাসিক যুগ থেকে একাধিক কারণে ভারতের জনপ্রিয় উৎসবের আকার নেয় রাখীবন্ধন উৎসব। মুঘল আমলেও সম্রাট হুমায়ুনের সাহায্য প্রার্থনা করে চিতোরের বিধবা রানি কর্ণবতী একটি রাখী পাঠিয়েছিলেন।
এছাড়া ব্রিটিশ রাজত্বকালে দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সাংঘাতিক রূপ নেয়। সেই সময় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখীবন্ধন উৎসব পালন করেন। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে এই উৎসবের শুরু হয়। প্রত্যেক মানুষের হাতে পবিত্র রঙিন সুতো বেঁধে উৎসবের সূচনা হয়েছিল। যদিও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই সুতোতে এসেছে আধুনিকতা। তৈরি হয়ে নানা কারুকার্য করা রাখীও। এমনকী রাখী তৈরী করতে নানা রকমের পুঁতি, পাথর ও জরি সহ রংবেরঙের সুতো ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া নানা ফুলের রাখীর চলও রয়েছে। তবে এবার এসি রাখী একেবারেই অন্যরকম।
বেনাচিতি বাজারের রাখী বিক্রেতা যোগেশ্বর যশওয়াল বলেন, রাখীর চাহিদা দুর্গাপুরের বাজারে ভালোই আছে। তৃণমূল সরকার আসার পরে চাহিদা আরও বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারে হাতে গোনা কয়েকজন রাখী বিক্রেতা রয়েছেন। বিভিন্ন কারুকার্য করা রাখী আমরা বিক্রি করে থাকি। তবে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় গতবছর রাখীর বাজার মন্দা গিয়েছে।
এবার বাজার চাঙ্গা করতে একদম অভিনব এসি রাখী এসেছে। বিশেষ করে করোনা আবহে গৃহবন্দি খুদে ছেলে মেয়েদের সাময়িক আনন্দ দিতে এই রাখী তাদের আকর্ষণ করছে। ওই রাখিগুলিতে যেমন কার্টুন চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তেমনই তার বিশেষত্বও রয়েছে। রাখীটি একটা প্লাস্টিকের কার্টুন চরিত্রের আদলে তৈরি। ওই প্লাস্টিকের ভিতরে মেন্থল বা মিন্ট জাতীয় পাউডার রয়েছে। মেন্থলের উপরে ছোট সুইচে চাপ দিলেই রাখীটি বেলুনের মতো ফুলে উঠবে। এরপরে হাতে রাখীটি বাঁধার সঙ্গে সঙ্গে শীতল ভাব অনুভূত হতে শুরু করবে। বাচ্চাদের জন্য মজাদার এই রাখীর ইতিমধ্যেই ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ২ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের রাখী রয়েছে। এসি রাখী বিক্রি করছি ৫০ টাকায়।
দুর্গাপুরের সুকান্তপল্লির বাসিন্দা স্নিগ্ধা সরকার, স্বস্তিকা সরকার বলেন, এই রাখী কিনে রাখীপূর্ণিমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারিনি। পরীক্ষা করার জন্য আগেই ভাইদের পরিয়ে দিয়েছি। ওই দিনে আবার পরাব।