রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বাংলায় তৈরি কাপড়েই স্কুল পড়ুয়াদের পোশাক বানানোর উদ্যোগ

August 11, 2021 | 2 min read

ভিনরাজ্যের কাপড়ে নয়, এবার বাংলায় (Bengal) তৈরি কাপড়েই স্কুল পড়ুয়াদের পোশাক (School Student Uniform) বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এজন্য বিভিন্ন জেলায় থাকা হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুমের ডেটাবেস তৈরির কাজ চলছে। পাশাপাশি রাজ্যের বস্ত্র বয়ন শিল্পের উন্নতিতে বাড়তি জোর দিতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে, রাজ্যের ব্যবসায়ীরাই কাপড় তৈরির বরাত পাবেন। পাশাপাশি এই শিল্পের হাত ধরে গ্রাম বাংলার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল হবে। রাজ্যের এই উদ্যোগে খুশি হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুমের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অভিনব। কারণ, অতীতে কখনও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।


নদীয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১৩টি ব্লকে কম-বেশি হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম রয়েছে। তার মধ্যে শান্তিপুর হস্ততাঁত উন্নয়ন দপ্তরের অধীনে রয়েছে ছ’টি ব্লক। এছাড়া, ওই দপ্তরের নবদ্বীপ অফিসের অধীনে রয়েছে সাতটি ব্লক। সম্প্রতি দপ্তরের রাজ্য আধিকারিকরা বিভিন্ন জেলায় কোথায় পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম রয়েছে, সেগুলির বর্তমান অবস্থা কেমন এবং পাওয়ারলুমের মালিকদের নাম, ফোন নম্বর ইত্যাদি বিষয়গুলি চেয়ে পাঠিয়েছিলেন।
শান্তিপুর হস্ততাঁত উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক উৎপল বসাক বলেন, সর্বশেষ সেন্সাস অনুযায়ী শান্তিপুর অফিসের অধীনে থাকা ছ’টি ব্লকে ১ লক্ষ ৭০হাজার তাঁতশিল্পীর নাম পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে প্রায় ১২হাজার পাওয়ারলুম রয়েছে। আমরা সমীক্ষা করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছি। ইতিমধ্যেই সেই তথ্য রাজ্যস্তরে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।


মূলত, এতদিন গুজরাতের সুরাত থেকে কাপড় এনে, তা দিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের পোশাক তৈরি করা হতো। তারপর সরকারিভাবে সেই পোশাক ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। এজন্য প্রতি বছরই ভিনরাজ্য থেকে কাপড় কিনতে রাজ্য সরকারের কোটি-কোটি টাকা খরচ হতো। কিন্তু এতে পড়ুয়াদের থেকে বেশি লাভ হচ্ছিল রাজ্যের বণিক মহলের। জানা গিয়েছে, চলতি বছরে নদীয়া জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ পড়ুয়াকে বিনামূল্যে স্কুলের পোশাক দেওয়া হচ্ছে। এজন্য খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। সরকার চাইছে, রাজ্যের উৎপাদিত কাপড়েই তৈরি হোক পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাক। এতে যেমন ভিনরাজ্য থেকে কাপড় আনার খরচ কমবে, তেমনই সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাপড় সরবরাহ করলে বিপুল অর্থ রাজ্যের ব্যবসায়ীদের মধ্যেই রোলিং হবে। 


তবে, কেন এতদিন রাজ্যের তৈরি কাপড়ে স্কুলের পোশাক তৈরি সম্ভব হয়নি? এব্যাপারে এক তন্তুজ আধিকারিক বলেন, মূলত কাপড়ের গুণগতমান এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, রাজ্যে উৎপাদিত খাদি বস্ত্র বা সুতির কাপড় জলে ধোয়ার পর কিছুটা কমে যায়। তাছাড়া, ওই কাপড় কুঁচকে যাওয়ায় পড়ুয়াদের পোশাক তৈরিতে ঝুঁকি নিতে চায়নি রাজ্য সরকার। নতুন এই উদ্যোগে তন্তুজ বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, সেক্ষেত্রে কাপড়ের জন্য আর সুরাতের মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন হবে না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#School uniform

আরো দেখুন