উন্নয়নের লক্ষ্যে বিমলের সাথেই কাজ করার বার্তা বিনয়ের
বিমল গুরুং (Bimal Gurung) আর বিনয় তামাং (Binay Tamang) বৈঠকের পর থেকেই পাহাড়ে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন – কবে পুরনো দলে ফিরবেন বিনয়। ফের কবে একসঙ্গে গুরুং-তামাং পাহাড়ের মানুষের পাশে দাঁড়াবে। এসব প্রশ্নই যখন পাহাড়ের বাঁকে ধাক্কা খাচ্ছে, ঠিক তখনই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিমল গুরুং জানিয়ে দিলেন, ”বিনয় তামাংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকার সৌজন্যমূলক। রাজনীতি নিয়ে কোনওরকম আলোচনা হয়নি। পাহাড়ের নানা সমস্যা নিয়েই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছি। মাঝে দু’জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তবে এখন সব মিটে গিয়েছে। আগামীতে একসঙ্গে এক মঞ্চে থাকবে কিনা তা সময় বলবে। তবে পাহাড় নিয়ে বিজেপি মিথ্যার রাজনীতি করছে। তার বিরুদ্ধে আমরা সকলেই রয়েছি।” যদিও বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ের চালসায় সাংবাদিক বৈঠক করে তামাংও জানিয়ে দিলেন, উন্নয়নের স্বার্থে একসঙ্গেই কাজ করবেন তাঁরা।
দেশের রাজনীতিতে পাহাড় সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। সব দলের নজর থাকে পাহাড় রাজনীতির দিকে। বিমল গুরুং-বিনয় তামাংয়ের বিবাদ যেমন নজর কেড়েছিল দেশের রাজনৈতিক মহলের। একইভাবে তাঁদের আবার মিলমিশ হওয়ার দিকে নজর রয়েছে সকলের। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর চলতি বছর জুলাই মাসে নিজের তৈরি মোর্চা ছেড়ে দেন বিনয় তামাং। এরপর চার বছর পর তিনি নিজে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক নিয়ে বিমল গুরুং বলেন, ”আমি পাহাড়ের অভিভাবক। সকলের দুঃখ-কষ্ট আমাকে শুনতে হয়। তাই বিনয় তামাংয়েরও নানা কষ্টের কথা শুনলাম। তবে আমরা পাহাড়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা করেছি। পাহাড়ের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কী করা যায়, তা নিয়েও শলা-পরামর্শ করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক কোনও আলোচনা হয়নি। আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্যই চার বছর দেখা হয়নি। এখন সব মিটে গিয়েছে।” পাশাপাশি, পাহাড় সমস্যা নিয়ে বিজেপির ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে গুরুং বলেন, ”আমি থাকতেও এরকম অনেকবার হয়েছে। তাই এসব বলে পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে মিথ্যার রাজনীতি করছে বিজেপি। আমাদের চিঠি পাঠালেও বৈঠকে যাব না। আর এই বৈঠকও প্রতিবারের মত ভেস্তে যাবে। কারণ, রাজ্য সরকার যাবেনা। আসলে পাহাড়ে কাজ না করে এসব করতেই ব্যস্ত বিজেপি।”
প্রসঙ্গত, পাহাড়ের মানুষের মূল দাবি পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড। আশির দশকে GNLF নেতা সুভাষ ঘিসিং এই আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ২০০৭ সালে তৈরি হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (GJM)। একই দাবিতে ফের পাহাড় উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বিমল গুরুং, বিনয় তামাং, অনীত থাপা, হরকা বাহাদুর ছেত্রী-সহ আরও অনেকে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার আসার পর ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(GTA) গঠন করে। পাহাড় সমস্যার সাময়িক সমাধান হয়। ফের ২০১৭ সালে সেই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে উত্তপ্ত হয় পাহাড়। প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন গোর্খা। তখনই পাহাড়ছাড়া হন বিমল গুরুং। আর পাহাড়ে নতুন নেতা হন বিনয় তামাং। দু’জনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে দুটি আলাদা মোর্চা তৈরি হয়। ফের চার বছর পর দু’জন একসঙ্গে পথ চলার ইঙ্গিত দিয়ে রাখল পাহাড়বাসীকে। তবে বৃহস্পতিবার বিনয় তামাং সাংবাদিক সম্মেলন করে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পাহাড়ের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবেন তাঁরা।