নতুন করে সেজে উঠবে রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন এলাকা
দক্ষিণ কলকাতার ‘ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্র সরোবর (Rabindra Sarobar)। ইট-কাঠ-কংক্রিটের শহরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান দিতে এই জলাশয় ও সংলগ্ন এলাকার গাছগাছালির অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। এবার এই চত্বরকে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। রবীন্দ্র সরোবর দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধীন কেএমডিএর উপর। তারাই ধাপে ধাপে নতুন সাজে সাজিয়ে তুলবে রবীন্দ্র সরোবরকে। কেএমডিএ সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত সৌন্দর্যায়নের রূপরেখা ঠিক করতে সাতজন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু আচার্যকে এই কমিটির শীর্ষে বসানো হয়েছে। কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে রবীন্দ্র সরোবর সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছেন। কোথায় কোথায় নতুন ধরনের গাছ লাগানো যাবে, ফাঁকা বা আগাছা ভরা জায়গাগুলিকে কীভাবে যথাযথ পরিকল্পনার আওতায় আনা যাবে—এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক হয়েছে, নিউটাউনের ইকো পার্কের মতো এখানেও বাটারফ্লাই গার্ডেন এবং ওষধি গাছের বাগান করা হবে। নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে লিলিপুল নামে শিশুদের পার্কটি। এমনিতেই রবীন্দ্র সরোবর চত্বর মর্নিং ওয়াকারদের প্রিয় জায়গা। তাছাড়া সারাদিনে অজস্র মানুষ এখানে পরিবেশের কোলে সময় কাটাতে চলে আসেন। তাঁদের কাছে এই চত্বরকে আরও আকর্ষণীয় ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে তুলে ধরাই সরকারের লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।
রবীন্দ্র সরোবরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এখানকার জীব বৈচিত্র। সৌন্দর্যায়নের ক্ষেত্রে এই দিকটি অক্ষত রেখেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, বিগত কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে এই চত্বরের যেসব বড় গাছ পড়ে গিয়েছে, সেগুলির গুঁড়ি বা মাটিতে বসে থাকা অবশিষ্ট কাণ্ডকে ব্যবহার করা হবে সৌন্দর্যায়নের কাজে। হস্তশিল্পীদের কাজে লাগিয়ে সেইসব গাছের অবশিষ্ট কাণ্ডকে বিভিন্ন সুদৃশ্য মডেলের রূপ দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতার সেরা পুজোগুলির দুর্গাপ্রতিমা রাখা হয় রবীন্দ্র সরোবর চত্বরের একাংশে। এই অংশের নাম ‘মা ফিরে এলো’। তার পাশেই রয়েছে শিশুদের জন্য লিলিপুল নামে একটি উদ্যান। এই জায়গাগুলিকে আরও সুন্দর করে এবং নিত্যনতুন সরঞ্জামে সাজিয়ে তোলা হবে। নতুন আর কী কী করা যায়, সেই ব্যাপারেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এই কমিটি।
এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য সম্প্রতি একটি বৈঠক করেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কেএমডিএর চেয়ারপার্সন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, রবীন্দ্র সরোবরে নিয়মিতই গাছ লাগানো হয়। এখন থেকে তা করা হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে। এখানে একটি বাটারফ্লাই গার্ডেন করা হবে। হরেক রকম প্রজাপতি আসবে সেখানে। ওষধি গাছের বাগানও করা হবে। তবে সবটাই করা হবে সরোবরের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখেই। শহরবাসীর কয়েকঘণ্টার গন্তব্য হিসেবে রবীন্দ্র সরোবর এই সৌন্দর্যায়নের পর আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী প্রশাসনের কর্তারা।