ইতিহাসকে অক্ষত রেখেই ‘হাইটেক’ হচ্ছে বেলেঘাটার গান্ধীভবন
সাদা গম্বুজে নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে। টানা লম্বা বারান্দা। গাছগাছালি বেষ্টিত খিলান দেওয়া বিশাল বাড়িটার পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাস। বেলেঘাটার গান্ধীভবন (Gandhi Bhavan)। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সেই বাড়িটি নতুন করে সংস্কার হচ্ছে। ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রেখেই ‘হাইটেক’ হচ্ছে কলকাতার এই গান্ধী আশ্রম।
সময়টা ১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট। প্রাকস্বাধীন ভারতবর্ষের হিংসা-হানাহানিতে শোকাহত মহাত্মা গান্ধী একটু শান্তির খোঁজে তখন কলকাতার এই ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন নাম ছিল হায়দরি মঞ্জিল। গান্ধী পরবর্তী সময়ে সেটাই হয়ে গেল গান্ধীভবন। তৈরি হয় সংগ্রহশালা। সম্প্রতি গুজরাতের গান্ধী আশ্রমের সংস্কার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে।
অভিযোগ, সংস্কারের নামে ইতিহাস নষ্ট করে আশ্রম প্রাঙ্গণেই তৈরি করা হচ্ছে আধুনিক ভবন। কিন্তু সেই সবরমতী আশ্রম থেকে বহু দূরে কলকাতায় মান্যতা দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখেই সংস্কার হয়েছে। সংস্কারের পর ঘরের সংখ্যা বাড়ছে। তৈরি হয়েছে গ্যালারি। রয়েছে মহাত্মার লেখা চিঠি, বিছানা, চরকা, ঘড়ি, লাঠি সহ তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস। আধুনিক রূপ পাচ্ছে সেই সংগ্রহশালাটি। থাকবে ই-ভিজিটরস বুক, ডিজিটাল লাইব্রেরি। দেখানো হবে গান্ধীজির জীবন ও গান্ধীভবনের ইতিহাসের স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র। নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে প্রদর্শনী হবে। তবে সেই ‘হাইটেক’ কাজকর্ম এখনও পর্যন্ত শুরু করা যায়নি। গান্ধী স্মারক সমিতির সম্পাদিকা পাপড়ি সরকার বলেন, করোনার কারণে উদ্বোধন অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। তবে ভিতরের অন্দরসজ্জার কাজকর্ম প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ। ডিজিটালাইজেশনের কাজ বাকি রয়েছে। আগের তুলনায় আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে এই সংগ্রহশালা। তবে উদ্বোধন কবে করা যাবে, সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
আজ শুক্রবার গান্ধীজির এই ভবনে পদার্পণ করার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে ৭৫ জন গরিব মানুষের রেশন সামগ্রী তুলে দেবে স্মারক সমিতি। একটা সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা গান্ধীজির পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী (Gopal Krishna Gandhi) ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে এই ভবনের কিছু সংস্কারের কাজ করিয়েছিলেন। তারপর ২০১৮ সালের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভবনটিকে আরও আধুনিক মিউজিয়াম হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। বরাদ্দ হয় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সেই কাজ এগচ্ছে। আমজনতা বিশেষ করে পড়ুয়াদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এই সংগ্রহশালা। ইতিহাস এবং আধুনিকতার মেলবন্ধনে পুনর্জন্ম হচ্ছে গান্ধীভবনের।