চটের বদলে সিন্থেটিক ব্যাগ, রাজ্যের আপত্তিকে আমল দিচ্ছে না কেন্দ্র
রাজ্যের আপত্তিকে আমল না দিয়ে চাল-গমের মতো খাদ্যশস্যের জন্য চটের বদলে সিন্থেটিক ব্যাগ ব্যবহারের পথেই এগচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই আশঙ্কা থেকেই দুই অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য পাঞ্জাব ও ছত্তিশগড় পৃথকভাবে চটের বস্তা কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু পীযূষ গোয়েলের নেতৃত্বাধীন খাদ্যমন্ত্রক গত এক সপ্তাহে একাধিক নির্দেশ বের করে চটের পাশাপাশি সিন্থেটিক ব্যাগের ব্যবহারে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। এমনকী, পরের অর্থবর্ষের রবি মরশুমে চাল-গমের জন্য কোন রাজ্যে কত বস্তা লাগবে, সেই হিসেব আগাম চাওয়ায় এরাজ্যের চটশিল্প (Jute industry) সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে। এ নিয়ে দরবার করতে চটকল মালিকদের সংগঠন আজ-কালের মধ্যেই দিল্লিতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রক সূত্রের অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এর পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। চলতি খরিফ মরশুমে চটকলগুলি বরাত অনুযায়ী চটের ব্যাগ সরবরাহ করতে পারছে না। খরিফ মরশুমের জন্য ২৪ লক্ষ গাঁট চটের ব্যাগের বরাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চটকলগুলি সব মিলিয়ে ১৫ লক্ষ গাঁট সরবরাহ করতে পারবে বলে জানিয়েছে। এই অবস্থায় বিকল্প ভাবনার পথে এগতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ বলছে, কোভিড এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত পাট-বর্ষে কাঁচাপাটের অভাব দেখা দিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সে কথা বস্ত্রমন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে। তাহলে এত আগে থেকে চটের ব্যাগের সঙ্গে সিন্থেটিক ব্যাগের চাহিদা কত হতে পারে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে কেন?
খাদ্যমন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি ইন্দ্রদীপ কান্দওয়ালের জারি করা দু’টি নির্দেশ চটশিল্পের আশঙ্কাকে আরও দৃঢ় করেছে। কান্দওয়াল ওই নির্দেশ পাঠিয়েছেন ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া ও ধান-গম উৎপাদনকারী দেশের ১৫টি রাজ্যের খাদ্যদপ্তরকে। ওই আদেশে তিনি চলতি খরিফ মরশুমের জন্য চটের বস্তার বরাতের পরিকল্পনাকে পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছেন। দ্বিতীয় চিঠিতে আগামী রবি মরশুম তথা নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত একই চাহিদার কথা আগাম জানতে চেয়েছেন। দু’টি হিসেবই ৩১ আগস্টের মধ্যে মন্ত্রকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমনকী, চটের পাশাপাশি সিন্থেটিক ব্যাগ সরবরাহের বিষয়টিও কান্দওয়াল উল্লেখ করেছেন গুরুত্ব সহকারে। একইসঙ্গে সিন্থেটিক ব্যাগের জন্য খাদ্যশস্যের গুণগত মান কমলে তার দরুণ কোনও আর্থিক ক্ষতির দায় কেন্দ্র বহন করবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ নিয়ে চটকল মালিকদের উদ্বেগের সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। রাজ্যের খাদ্যদপ্তর সম্প্রতি সিন্থেটিক ব্যাগের বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে দিল্লিকে। কিন্তু তাদের সেই আপত্তিকে আমল দেয়নি কেন্দ্র। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়কেও অবহিত করা হয়েছে। আইজেএমএ’র পাশাপাশি খাদ্যদপ্তরও চাইছে, স্বয়ং মমতা এবিষয়ে কড়া মনোভাব নিয়ে দিল্লিকে চিঠি দিন।