আয়কর দপ্তরের ৪ হাজার কোটি টাকার নতুন পোর্টাল মুখ থুবড়ে পড়ল
আয়কর রিটার্ন দাখিলের পুরনো ওয়েবসাইট এখন বাতিল। আড়াই মাস আগে চালু হয়েছে নতুন পোর্টাল। সেটি তৈরি এবং পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ব্যয় করছে ৪ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। অথচ, খরচই সার! গোড়া থেকে মুখ থুবড়ে পড়েছে পোর্টালটি। প্রথম দিকে সাধারণ করদাতাদের এনিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু, আয়কর রিটার্ন দাখিল করার শেষ তারিখ এগিয়ে আসতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে দেশের কয়েক কোটি করদাতার। লাগাতার অভিযোগের ঠেলায় হিমশিম খাচ্ছে অর্থমন্ত্রক। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে পর্যন্ত স্বীকার করতে হয়েছে সমস্যার কথা। কয়েকদিন অন্তর নিয়ম করে তিনি আশ্বাস দিচ্ছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পোর্টাল ঠিক হয়ে যাবে। তবে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জনসাধারণের করের টাকার এমন শ্রাদ্ধ করার যুক্তি কী, তা বোধগম্য হচ্ছে না কারও।
চলতি বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। এরপর রিটার্ন দাখিল করলে করদাতাকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেট ফি দিতে হবে। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, এখনও এক শতাংশ করদাতাও রিটার্ন দাখিল করে উঠতে পারেননি। ধরে নেওয়া যাক আগামী দিনে পোর্টালটি ঠিকঠাক কাজ করবে। তাতে সমস্যা কমবে কি? একসঙ্গে অনেকে রিটার্ন দিতে গেলেও ওয়েবসাইটটি বিগড়ে যেতে বাধ্য।
ঠিক কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে? কর বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের দাবি, সমস্যা একটা নয়। তবে সাধারণ করদাতাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা রিটার্নের এক থেকে চার নম্বর ফর্ম পূরণ করা। প্রথমত, পোর্টালটি এতটাই ‘স্লো’ যে, একটা ফর্ম পূরণ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। দিনের পর দিন চেষ্টা করে একটি রিটার্ন দাখিল করা যায়নি, এমন উদাহরণও আছে। ২৬এএস বা আইটিআর ডাউনলোড, আইটিআর অ্যাকনলেজমেন্ট প্রভৃতিতে দেখা দিচ্ছে বড় সমস্যা। রিটার্ন দাখিলের পর ই-ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। তাতেও সমস্যা হচ্ছে। তাহলে উপায় কী? মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অরবিন্দ আগরওয়াল বলেন, ‘বহু চেষ্টায় যদি রিটার্ন দাখিল করা যায় এবং ভেরিফিকেশনে সমস্যা হয়, তাহলে এই পোর্টালেরই গ্রিভান্স সেলে অভিযোগ জানিয়ে রাখা ভালো। প্রয়োজনে তার একটি স্ক্রিন শট বা ছবি রাখা দরকার। ইনকাম ট্যাক্স বিভাগ যদি ই-ভেরিফিকেশন না হওয়ার নোটিস দেয়, তাহলে অন্তত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ মিলবে। আর গোড়াতেই রিটার্ন দাখিলে ধাক্কা খেলে চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ, যে কোনও সময় পোর্টালটি নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে।’ আয়কর দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, আগে যে পোর্টালটি ছিল, তা নিয়ে বড় ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা আগে তেমন শোনা যায়নি। সন্তুষ্টই ছিলেন করদাতারা। তাহলে এই নয়া উৎপাত কেন?