হাতিয়ার জাতি গণনা, মোদীসঙ্গ ত্যাগ করতে চলেছেন নীতিশ?
শেষতম গুরুত্বপূর্ণ জোটশরিকও কি আগামীদিনে বিজেপির সঙ্গত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে? নীতীশ কুমারের আচরণ নিয়ে চরম সংশয় তৈরি হয়েছে বিজেপির মধ্যে। হঠাৎ জাতিগত জনগণনার দাবিতে নীতীশ কুমার মোদি সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরই এই জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই নীতীশ কুমার এবং তাঁর দলের এমপিরা দাবি করে আসছেন যে, জাতির ভিত্তিতে জনগণনা করতে হবে। এর আগে ২০১১ সালের জনগণনার পর পৃথক জাতিগত জনগণনা হলেও সেই রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশ করেনি। আর এবার জাতিগত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আর্থ সামাজিক কোনও পৃথক জণগণনা করা হবে না বলেই মোদি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংসদেও প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে বাদল অধিবেশনে।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, বিহারের বেশ কিছু বিজেপি বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এই দাবি তোলা হয়েছে। বিজেপি বিরোধী দলগুলির সুরেই নীতীশ কুমার একই দাবি তুলেছেন। বৃহস্পতিবার নীতীশ কুমার বলেছেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরেই এই দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী আমাকে সময় দিয়েছেন। সোমবার দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করব। জাতিগত সেন্সাস করতে হবে এই দাবি তুলে বিহারের পক্ষ থেকে একটি তালিকাও দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
নীতীশকুমারের এই দাবির সঙ্গে ইতিমধ্যেই সহমত পোষণ করেছে বিহারের বিরোধী দল লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা লালুপুত্র তেজস্বী যাদব আগেই বলেছেন, নীতীশ কুমারের এই দাবি আমাদেরও। মুখ্যমন্ত্রী বারংবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও, তাঁকে সময় দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। এটা বিহারের অসম্মান।
এরপরই বৃহস্পতিবার নীতীশকুমার নিজেই জানান সোমবার তাঁর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা। তেলুগু দেশম থেকে শুরু। এরপর শিবসেনা, শিরোমণি আকালি দল। একের পর এক শক্তিশালী দল এনডিএ জোটের সঙ্গ ছিন্ন করেছে সাম্প্রতিককালে। প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ পাসোয়ান ও তাঁর কাকার মধ্যে তিক্ততার জেরে লোকজনশক্তি পার্টি এখন দ্বিধাবিভক্ত। এই অবস্থায় চিরাগ পাসোয়ান আর বিজেপির সঙ্গে নেই। তিনি আভাস দিয়েছেন, আগামীদিনে বিহারে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সমঝোতা করবেন। সুতরাং ২০২৪ সালের আড়াই বছর আগেই বিজেপির কাছে একটিও শক্তিশালী জোটসঙ্গী নেই। এর মধ্যেই সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা রিপোর্টে বিজেপি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। মুড অব দ্য নেশন নামক ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মোদির জনপ্রিয়তা কোভিড পরবর্তী সময়ে ৭৪ শতাংশের পরিবর্তে ২৪ শতাংশে এসে ঠেকেছে। উল্টোদিকে যেখানে বিরোধীদের ১৫টি দল জোট গঠনের জন্য ক্রমেই অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে বিজেপির পাশে আনুষ্ঠানিক জোটে বৃহৎ আঞ্চলিক শক্তি নেই। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ নীতীশ কুমার জাতির ভিত্তিতে জনগণনা করার জোরদার দাবিতে যেভাবে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, সেটা উদ্বেগ তৈরি করেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। তিনিও কি আগামীদিনে এনডিএ ছাড়ছেন? এই চর্চা শুরু হয়েছে।