দেশ বিভাগে ফিরে যান

দল বা ব্যক্তির ‘প্রাধান্য’ কমাতে চাই কোর কমিটি, প্রস্তাব মমতার, সায় সনিয়ার

August 21, 2021 | 3 min read

বিরোধী জোটের প্রক্রিয়ায় কোনও দল বা ব্যক্তির ‘প্রাধান্য’ যাতে না থাকে, এ বার সেই দিকে নজর পড়ল। যার মূল উদ্যোক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

বিরোধীদের কোনও সম্মিলিত কর্মসূচির ক্ষেত্রে কংগ্রেস (Congress) ‘প্রাধান্য’ পেয়ে যাচ্ছে, এমন একটি ধারণা কিছুদিন ধরে ঘুরছে। বিশেষত তৃণমূল শিবির থেকে এই ধরনের মনোভাব সামনে আসে। রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) উদ্যোগে দিল্লিতে বিরোধীদের একাধিক কর্মসূচিতে তৃণমূল না থাকায় সেই আলোচনা আরও পুষ্ট হয়।

শুক্রবার কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) ডাকে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতার প্রস্তাব, জোটের কর্মপন্থা ঠিক করার ক্ষেত্রে একটি ‘কোর কমিটি’ তৈরি করা হোক। তা হলে কোন কোন বিষয়ে বিরোধীরা সম্মিলিত ভাবে কী কী পদক্ষেপ করবে, ওই কোর কমিটি তার দিকনির্দেশ করতে পারে। সনিয়া নিজে মমতার এই প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হয়েছেন। সায় মিলেছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন-সহ অন্য অনেক বিরোধী নেতারও।

মমতা বৈঠকে বলেন, ‘‘ভুলে যান কে নেতা। আমরা কেউ নেতা নই। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার হিসেব সরিয়ে রাখুন। আসল হল জনগনের স্বার্থে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই। তাতে সকলকে একসঙ্গে পা মেলাতে হবে। ইগো রাখলে চলবে না।’’

এ দিনের বৈঠক ছিল ভার্চুয়াল। মমতা কলকাতা থেকে তাতে যোগ দেন। বৈঠকে কী আলোচনা হবে, সেই সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব বৃহস্পতিবারই আমন্ত্রিত নেতাদের কাছে পৌঁছেছিল। বলা হয়েছিল, নেতারা সেটি পড়ে সম্মতিসূচক সই দিতে পারেন। সূত্রের খবর, মমতা সই করেননি। কারণ তিনি মনে করেছেন, আলোচনার আগে কোনও লিখিত প্রস্তাবের খসড়ায় সই করা উচিত হবে না। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সনিয়ার সঙ্গে তাঁর বার্তা বিনিময়ও হয়। মমতার কোনও বক্তব্য বা সংযোজন থাকলে তিনি প্রস্তাবে সেটি যুক্ত করতে পারেন, এমন কথাও তাঁকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু মমতা বলে দেন, আলোচনা যা হবে সম্মিলিত ভাবে হওয়া উচিত।

এই আবহে এ দিনের বৈঠক শুরু হয় বিকেল ৪টে নাগাদ। চলে প্রায় ঘণ্টা চারেক। সনিয়ার প্রারম্ভিক বক্তব্যের পরে বলেন শরদ পওয়ার। তার পরে মমতা। প্রথমেই জোটের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘‘সব বিরোধী দল একসঙ্গে আসবে না কেন?’’ সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে ডাকা হয়নি কেন, এই প্রশ্নও তোলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর মতে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাউকে বাইরে রাখা ঠিক হবে না। পযর্বেক্ষকদের অনেকের ধারণা, সনিয়ার ডাকা এ দিনের বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আপের অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ যাঁরা ডাক পাননি, মমতা সেই দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, বিজেপির বিরোধী যে দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত নয়, তাদেরও ডেকে নেওয়া দরকার।

এর পরেই এক এক করে প্রসঙ্গ তুলতে থাকেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর মতে, ‘‘খসড়া প্রস্তাবে প্রচুর বিষয় রয়েছে। একসঙ্গে এত বিষয় সামনে না এনে গুরুত্বের বিচারে অল্প কয়েকটি বিষয় বেছে নিয়ে আগে সেগুলির উপরে ভিত্তি করে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।’’ সেখানে তিনি মোটামুটি পাঁচটি বিষয়ের উপরে জোর দেন। সেগুলি হল, সকলের জন্য কোভিড টিকা, কৃষি আইন প্রত্যাহার, পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানো এবং আয়করের আওতার বাইরে থাকা পরিবার-পিছু সাড়ে সাত হাজার টাকা, পেগাসাস নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত।

এরই সঙ্গে মমতা বলেন, দেশে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে শাসক বিজেপি যে ভাবে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করছে, তার বিরুদ্ধেও জোরালো প্রতিবাদ করতে হবে। এই সূ্ত্রে তিনি সিবিআই, ইডি’র পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও উল্লেখ করেন। বাংলায় ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট দেখার পরে কলকাতা হাই কোর্ট ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দিয়েছে। বাকি অভিযোগের তদন্তে গড়া হয়েছে ‘সিট’। মমতা এ দিনের বৈঠকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশে কাজে লাগানোর পিছনে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ‘দ্বিতীয় ব্যক্তি’। অনেকেই মনে করছেন, এই ইঙ্গিতের নিশানা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ ছিল তাঁর বক্তব্যে। মমতার আরও অভিযোগ, শাসক বিজেপি সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে চাপে রেখেছে।

তৃণমূল সূত্রে দাবি, তাদের নেত্রীর এই সব বক্তব্য সম্পর্কে সামগ্রিক ভাবে সবাই একমত। মমতা বৈঠকে প্রস্তাব দিয়েছেন, মাসে অন্তত এক বার কোর কমিটির বৈঠক হোক। আর বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়ে কথা বলুক ঘনঘন। তাতে অনেক বিষয়ে সম্মিলিত পদক্ষেপ ঠিক করা যাবে। আবার নতুন কোনও বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #sonia gandhi

আরো দেখুন